প্রাথমিক অনুবাদ
সৌরেন সেন
অনুবাদ সম্পাদনা, কণ্ঠ, ও কারিগরী সহযোগিতা
ফরহাদ হোসেন মাসুম
পুরো বাংলা ট্রান্সক্রিপ্ট
আমাদের বড়বড় শহরগুলোতে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে প্রকৃতির ছোঁয়া আর নেই। রাস্তা, ফুটপাত, যানবাহন, পার্কিং গ্যারেজ, বিলবোর্ড অথবা গ্লাস আর স্টিলে তৈরি বিশাল সব দালান – সবই হয়তো দেখবেন। কিন্তু গাছ দেখবেন না, ঘাস দেখবেন না;
অন্য কোন প্রাণীও দেখবেন না, মানুষ ছাড়া। আমাদের চারপাশে শুধু মানুষ আর মানুষ।
শুধু গগনচুম্বী দালানগুলোর ফাঁক দিয়ে সোজা ওপরের দিকে তাকালে, দেখতে পাবেন একখণ্ড নীল আকাশ অথবা নক্ষত্রের দল; মানবজাতির উত্থানের বহু আগে যা যা ছিলো, তার স্মৃতিচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে এগুলো। আমাদের এই ছোট্ট গণ্ডিতে নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে খুশি হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। নিজেদের সুবিধার জন্য পৃথিবীকে আমরা কতোই না বদলে ফেলেছি! কিন্তু কয়েকশো মাইল ওপরে কিংবা নিচে গেলে কিন্তু আর কোনো মানুষ নেই। এই ব্রহ্মাণ্ডের ওপর আমাদের প্রভাব শূন্য!
দশ হাজার বছর, আমাদের দীর্ঘ ইতিহাসের ক্ষুদ্র একটি পরিসর! এর মধ্যেই আমরা যাযাবর জীবন পরিত্যাগ করেছি। উদ্ভিদ আর প্রাণী, দুটোকেই নিজের কাজে লাগিয়েছি। খাদ্যকে নিজের টেবিলে নিয়ে এসেছি, ওর পেছনে পেছনে আর ছুটছি না। স্থির এই জীবনযাত্রা বস্তুগত সুযোগ সুবিধা দিয়েছে ঠিকই, তবে দিয়েছে অস্থিরতা আর অপূর্ণতাও। শহর আর গ্রামে আস্তানা গড়ে ৪০০ প্রজন্ম কাটিয়ে দিয়েছি ঠিকই। কিন্তু যাযাবর মনটাকে আমরা এখনো ভুলতে পারিনি।
প্রত্যেক মহাদেশে, দুর্গম সব দ্বীপেও, এখন লোকে লোকারণ্য। মেরু থেকে মেরুতে, মাউন্ট এভারেষ্ট থেকে মৃত সাগরে, মহাসাগরের অতলে, এবং মাঝে মাঝে, ভূপৃষ্ঠের ২০০ মাইল ওপরেও এখন মানুষের বসবাস। প্রাচীন যুগের ঈশ্বরের মত, মানুষ এখন আকাশে বিরাজমান। এমনটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে অনুসন্ধানের কোনো জায়গা বোধহয় বাকি নেই। অনাবিল সাফল্য অর্জন করে ফেলেছে বলেই, অভিযাত্রীদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। কিন্তু এখনি এটা বলা যায় না। হয়তো এখনো সে সময় আসেনি। দূরবর্তী জগতগুলো এখনো হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে, অপার অজানা সম্ভাবনার।
চারপাশে এমন অনেক সমস্যা আছে, যা সমাধানে অর্থ প্রয়োজন; সেই অর্থ কি মানবজাতিকে অন্য গ্রহে পাঠানোর কাজে ব্যয় করা উচিৎ? আমাদের কি আগে সেসব সমস্যার সমাধান করা উচিৎ? নাকি সেগুলোর কারণেই নতুন গ্রহের সন্ধান করা উচিৎ? এই পৃথিবী আর সৌরজগৎ ভেসে আছে, আরো অনেক অনেক বিশ্ব দিয়ে ভরপুর এক মহাসাগরে, স্থানের অতলে।
পৃথিবীর মহাসাগরগুলো আমরা জয় করেছি, এবার মহাশূন্যের পালা।
Original video in English – The Humans by Carl Sagan
.