জ্যামি ব্রিন্ডলের অ্যাডভান্স ডিরেকটিভ

advance-directive-pic

আমার নাম জন প্রাইস এডি এবং একজনের জীবন মৃত্যুর ব্যাপারে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটিই আমার একমাত্র কাজ, আর এ কারণেই আমি এখানে, এই কাজের জন্যই এখানে আজাইরা পড়ে থাকা, অসংযত ভাষার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

সোজাসুজি বলতে গেলে, যদি এই বিশেষ ব্যক্তিটি তার হৃৎপিণ্ডে ধমনী প্রতিস্থাপন না করাতো, মস্তিষ্কে এর প্রভাব না পড়তো, পরবর্তীতে স্ট্রোক করে ডান পাশে অবশ হয়ে গিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি না হতো, আর চেতনা হারিয়ে না ফেলতো; তাহলে আজ আমি এখানে থাকতাম না।

এই অত্যন্ত অসহায় লোকটার কাছে আমি যেতেও পারি না, তাকে ছুঁতেও পারি না।  তার হাত ধরতে পারি না, তার কাঁধ ধরে ঝাঁকাতেও পারি না। তার কাছে শারীরিকভাবে যেতে পারি না, যাওয়ার চেষ্টাও করতে পারি না। সে আসলে জেগে ওঠেনি, এখানে আনার পর থেকে সে জেগে ওঠেনি। মাঝেমাঝে তার চোখ পিটপিট করে আর অসহায়ভাবে বামদিকের ক্যামেরাটার দিকে চেয়ে থাকে – ডানদিকে তাকায় না। আমি নিশ্চিতও না সে আসলে বাম ডান বোঝার মতো আর সজাগ আছে কিনা – মাঝেমাঝে সে গোঙ্গায় অথবা কাঁদে। কিন্তু নিশ্চিন্তে বলতে পারি সেই চোখগুলোতে তেমন দীপ্তি নেই। তারা তাকে একটা নল দিয়ে খাওয়াচ্ছে যেটা তার নাক দিয়ে পেটে চলে গেছে,  কারণ তার গলার পেশীগুলো আর তেমন ভালোমতো কাজ করে না, আর সে যদি কিছু খায়, সে খাবারের অর্ধেক সম্ভবত তার ফুসফুসে ঘোরপাক খায়।

সর্বোপরি, আমি বলি লোকটির মোটামুটিভাবে জঘন্য অবস্থা।

কিন্তু ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা কঠিন, খুব বেশি কঠিন।

এই কারণেই আমি এখানে। সে যা চেয়েছে, আমি যা চেয়েছি; তা আমার বলা উচিৎ।

এই কারণে সে তার চিন্তাশক্তির মাধ্যমে আমাকে তৈরি করেছে, বিশ বছর আগে, যখন সে তরুণ ও কার্যকর ছিল, এবং মস্তিষ্কের এক পাশে শ্বেতপদার্থের টুকরোতে তেমন পছন ধরেনি, (আপেলের ভেতর পোকায় ধরার মতো) তখন থেকে।

একদিন ঘুম থেকে জেগে ওঠে আপনি বাস্তব নন, এই কথাটা ভাবা খুব কঠিন।

আপনি কী হয়ে গেছেন তা দেখা আর তারপর প্লাগটা টেনে দেবেন কিনা সিদ্ধান্ত নেয়া আরো কঠিন।

ক্যারেন আসলে আমার সাথে কথা বলতে চায় বলে মনে হয় না – এটা একটা নিয়ম – কিন্তু আমি তাকে দেখতে পাই, এবং আমি এখানে তা সে জানে। সেই কেবল জন প্রাইসকে প্ররোচিত করেছিল – আসল জন প্রাইসকে, অর্থাৎ জন প্রাইস এডিকে নয়, অর্থাৎ আমাকে নয় – এই মেয়েটি সে, যে জন প্রাইসকে অ্যাডভান্স ডিরেকটিভ বানাতে প্ররোচিত করেছিলো।

আমি এটা কাঁচের মত পরিষ্কার স্মরণ করতে পারি, অবশ্যই পারি, ঠিক তেমনিভাবে যেমনিভাবে আমি আমার এই কৃত্রিম জীবনের প্রত্যেকটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা স্মরণ করতে পারি। তার বাবা মারা যাওয়ার সময়কার কথা। তাঁর কোনো স্ট্রোক হয়নি, তাঁর মস্তিষ্ক বিকল হয়েছিলো, কিন্তু হায়, আসলে শেষ পর্যন্তই ছিলো তাঁর এই বিকারগ্রস্থতা। আমরা বেশিরভাগ সময় তাঁকে দেখতে যেতাম। মনে হয়েছিল অনেকদিন বাঁচবেন, কিন্তু মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর মরে গেলেন। অধিকাংশ সময় তিনি তাকে চিনতেন না, এমনকি তার উপস্থিতি টেরও পেতেন না। মাঝেমাঝে তিনি কাঁদতেন আর মানুষের সাথে কথা বলতেন যারা সেখানে নেই। বেশিরভাগ সময়  তিনি কেবল চোখ পিটপিট করতেন, বিভ্রান্ত ও আহত দেখাতো তখন। তারপর মলমূত্র ত্যাগের কাজে মগ্ন হতেন।

ক্যারেন চাইতো তারা প্লাগটা টানুক, কিন্তু তারা পারতো না, অবশ্যই পারতো না। তারা আমাকে বলেছে, তারা কিছু চিকিৎসা বাদ দিতে পারতো, কিন্তু এতে তাঁকে খাওয়ানো বন্ধ হয়ে যেত, তাকে তরল খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে যেতো।

এটি তাদের সিদ্ধান্ত ছিলো না, তারা আমাকে বলেছিলো; ক্যারেনেরও ছিলো না।

“বাজে কথা,” ক্যারেন বলেছিলো, “আমি ছিলাম তার ছোট মেয়ে, ঈশ্বরের দোহাই,  তিনি আমাকে বড় করেছিলেন আর বদলে দিয়েছিলেন, অন্য কারো থেকে আমি তাঁর খুবই নিকটে ছিলাম; তোমার ধারণা আমি জানি না যে তিনি এটা অপছন্দ করতেন?”

কিন্তু এটা তাদের কিংবা আমাদের হাতে ছিলো না, এবং তাঁর মরে যেতে কয়েকটা দীর্ঘ সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছিলো মাত্র। যখন তিনি কেশে কশে সবুজ কফ ফেলতে শুরু করলেন, যখন তাঁর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো; ক্যারেন খুব খুশি হয়েছিলো।

ঠিক সেই সময়ের দিকে অ্যাডভান্স ডিরেক্টিভের পুরো ব্যাপারটা কেতাদুরস্ত হচ্ছিলো, অন্তত আপনি যদি এদের তৈরি করতে সমর্থ হতেন; আর আমরা খুব খারাপও করছিলাম না।

তাই আমরা স্ক্যান হয়েছি, আমরা উভয়েই হয়েছি।

এবং এভাবেই আমি এখানে আসি; আমি আমাকে সবজির মত তরতাজা দেখছি, সরাসরি দেখছি আমার ডিজিটাল খাঁচার এক হাজার একটা বৈদ্যুতিক জানালার মাধ্যমে।

আমি চালিয়ে যেতে চাইতাম না, যদি আমি আমি হতাম। আমি চিন্তা করে যাই আর বুঝতে পারি, শালার, এই কি আমি!

পুরো অবস্থাটা অদ্ভুত ফালতু।

ক্যারেন এর বাচ্চাকাচ্চা হয়েছে, সেটা আরো ফালতু।

জন প্রাইসকে যখন স্ক্যান করা হয় তখন টমি কেবল মাত্র চার বছর আর গ্রেইস ছিলো আমার (জনের) স্ত্রীর পেটে, হালকা ফুলে ওঠেছিলো পেটটা। এখন আমার বাচ্চারা বেড়ে ওঠেছে; আমি তাদের পুরো জীবনটা মিস করেছি। আমি টমিকে চিনতে পারি, তার চিবুকের ঢালু স্থানটা অথবা অন্যকিছু দেখে। এবং আমি গ্রেইসের মাঝে আমাকে খুঁজে পাই; আমাদের চোখ দুটো একইরকম।

তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশ দেখে আমি কল্পনা করার চেষ্টা করি তারা কিসের মতো হয়েছে। আমার কাছে চলচ্চিত্র, স্থিরচিত্র, জন্মদিন, ছুটির দিনসহ আরো অনেক কিছুর পুরো সংগ্রহ আছে। কিন্তু এসবের সাথে তাদের অনেক পার্থক্য। আমি এই সংগ্রহশালা পর্যালোচনা করে দেখি, এই শিশুগুলোর সাথে একটা সম্পর্ক অনুভব করার চেষ্টা করি, কিন্তু এটা আগ্রাসী কুয়াশার মতো; আর আমি অনুভব করি আমি তাদের উপর গোয়েন্দাগিরি করছি। তারা কি আসলেই আমার? হ্যাঁ কিংবা না। আমি নিশ্চিত নই।

টমি জনের বাম হাত ধরে আছে – তারা ডানহাতটা কম্বলের নিচে রেখেছে কারণ এটি ভয়ঙ্করভাবে ফোলা ও শক্ত, কেনো আমার কাছে জানতে চাইবেন না – এবং যখন পেছনে হালকা টান দেওয়া হয় হাতটা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এর কোনো মানে হয় না, আমি দেখতে পাচ্ছি এর কোনো মানে হয় না।  বেচারাটা কুকুরের খাবার হয়ে যেতে পারতো, তার চারপাশের সচেতনতার মাঝে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে পারতো ।  কিন্তু টমি  দেখতে পেল তার বাবা তার হাত চেপে ধরেছে, আর তার চেহারায় আশার বিশ্বাসঘাতক আভা।

ক্যারেন তার/আমাদের ছেলের মাথায় আঘাত করলো, আর একটি ক্যামেরার মাধ্যমে সোজা আমার দিকে তাকালো।  তার কান খাড়া। এর মানে কী? দ্বন্দ্ব? অসন্তোষ? নাকি ঘৃণা?

আমি আমার সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত হলাম – হায়, আমি কি আমাকে খুন করতে যাচ্ছি না?– কিন্তু আসলে এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

আমি সেটা চাইতাম না কারণ আমি তার উপর নির্ভর করে আছি।

অতএব, জন প্রাইস প্লাগ টানতে চাইতেন। মামলা শেষ।

আমি সিস্টেমে লগ ইন করলাম, আর আমার পছন্দ প্রবেশ করালাম।

কিন্তু ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে ঘটনার এখানেই শেষ নয়।

আমার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ক্যারেন জানতো – সে আমার সাথে প্রায় বিশ বছর ধরে থেকেছে; এমনকি ডিভোর্সের পরেও যোগাযোগ ছিলো, যার কারণে সে আমাকে বুঝতো। তাই সে জানে আমি কীভাবে চিন্তা করি (সেভাবেই হয়তো চিন্তা করতে হয়?), আর ঠিক আমার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে তার আপত্তি ছিলো।

অর্থাৎ এটা কোনো সহজ ব্যাপার না যে আমি তাকে মেরে আমিও শেষ হয়ে যাবো, ইলেকট্রনগুলোকে এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়ে।

যদি আমি আমার মৃত্যু চাই তাহলে এটার জন্য আমাকে লড়ে যেতে হবে।

আমি অবাক হই। কতটা বাস্তব সবকিছু! ঠিক বাস্তব জীবনের মতো! আমার ফুসফুস ফুলে ওঠে, বায়ুভর্তি হয়। আমি শুনতে পাই, স্বাদ নিতে পারি, গন্ধ শুঁকতে পারি, স্পর্শ করতে পারি। এবং এই কথিত ‘বাস্তব’ বিশ্বও আমাকে দেখতে পায়। আমরা কেবল একটি অনন্ত কাঁচের আবরণে পরস্পরের থেকে আলাদা, এই আর কি! আমি এই কম্পিউটারের পর্দায় তৈরি একটি খাঁচায় বন্দী।

ক্যারেন আমার সামনে, একটি পাতলা কাঁচের জানালার পেছনে দাঁড়িয়ে।  এখনো পর্যন্ত আমরা একে অপরের সাথে কথা বলতে পারিনি। এখন মামলা আদালতে গড়িয়েছে আর এখানের নিয়ম আলাদা।

জন প্রাইসকে মেরে ফেলার ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত আমাকে যাচাই করতে হবে না। অবশ্যই না। বিবাদের বিষয় এটা না। অ্যাডভান্স ডিরেকটিভ হিসেবে তার জীবনের উপর হস্তক্ষেপ করার সম্পূর্ণ ক্ষমতা আমার আছে। আমার ক্ষমতা তখন থেকে ছিলো যখন থেকে তার পর্যাপ্ত চেতনা ফিরে আসার ব্যাপারে সন্দেহ হয়, যখন থেকে আমার নথিগুলোর ব্যবহার করা শুরু হয়, আর আমার এই কৃত্রিম সত্তা চালু করা হয়।

না, আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছি কি নিচ্ছি না সে ব্যাপারে ক্যারেন কোনো মামলা করতে পারেনি। আদৌ তা সম্ভব না।

যা সে করতে পারে তা হলো আমার অস্তিত্বের অধিকারে আক্রমণ করা, করেছেও।

“মানুষ বদলে যায়,” সে জুরিবর্গকে বলে, “এই শুনানি ত্যাগ করার পর, আজ সকালে আসা সেই ব্যক্তিটি আর আপনি নন। প্রতিটি অভিজ্ঞতাই আপনাকে বদলে দেয়। যা কিছু আপনি শেখেন, যা কিছু আপনি দেখেন ও শুনেন, আপনার জীবনের প্রত্যেকটা ঘটনা, আপনাতে গড়ে ওঠা সবই আপনাকে বদলে দেয়।  আমরা, আমাদের সবাই, একইভাবে বদলে যাই” সে কি করতে যাচ্ছে তা সুস্পষ্ট। অন্যান্যরাও একই অবস্থায় একই কাজ করেছে। কখনো সফল হয়েছে, কখনো মুখ থুবড়ে পড়েছে।

“টিভি পর্দায় আমার প্রাক্তন স্বামীর যে কৃত্রিম অবয়বটা দেখতে পাচ্ছেন, সে আমার প্রাক্তন স্বামী নয়” সে বলে যাচ্ছে, “এটি মানুষ ‘জন’ এর বিশ বছর আগের তৈরিকৃত একটি কৃত্রিম সত্তা। আসলে এই মূহুর্তে এমন কোনো নিয়ম নেই যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর অ্যাডভান্স ডিরেক্টিভদের সয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয় – এবং কেউ তর্ক করতে পারে যে, এমনকি পাঁচ বছর খুব দীর্ঘ সময় হতে পারতো – কারণ এমন কোনো নিয়ম নেই যে, কত নিষ্ঠুরভাবে ভাবা যায় আর নিয়মে আবদ্ধ করা যায় তার উদাহরণস্বরুপ, নকল অ্যাডভান্স ডিরেকটিভ সম্পর্কিত পুরো বিজ্ঞান ছিলো ও চলতে থাকবে”।

ক্যারেন কথা বলায় বরাবরই বেশ দক্ষ ছিলো।  যখন থেকে আমি চিনি সেই সময় থেকে এখন আরো চতুর হয়েছে, বেশি চতুর। এই নারী, যাকে আমি ভালোবাসি, সে আরো বেশি আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য, আরো বেশি স্বাধীন হওয়ার জন্য গত বিশ বছর ধরে যা করেছে তা দেখে আমি অবাক হই।

প্রসঙ্গক্রমে এটি অবস্থাকে আরো জটিল করে তুলেছে।

আমি তাকে ভালোবাসি।

আমি তাকে ভালো না বেসে পারি না। যখন আমাকে স্ক্যান করা হয়েছে তখন জন তাকে ভালোবাসতো, তাই এখন আমি তাকে ভালোবাসি। ব্যাপারটা হলো সে হালকা সাজসজ্জা করলেও, চুলগুলো বাদামীর চেয়ে বেশি ধূসর হলেও তা তাকে এতটুকু বদলে দেয়নি।

আমি তাকে ভালোবাসি। আমি তাকে ভালোবাসি আর সে আমাকে ঘৃণা করে। এখন আমার সময় এসেছে মুখ খোলার।

আমি ক্যারেনকে নয়, জুরিকে সম্বোধন করলাম। আসল ব্যাপার হলো, আমি এমনকি ক্যারেনের দিকে তাকাতেও পারি না। তার অবজ্ঞার দৃষ্টি দেখার জন্য আমি প্রস্তুত নই।

“আমি আসলে বাস্তব নই তা নয় শুধু, আমি মানুষটির একটি ভ্রমাত্মক ভ্রান্তির ভিত্তিতে তৈরি, ক্যারেন প্রাইস এটা আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে,”  আমি শুরু করি।   আমি আমার কণ্ঠ দৃঢ় রাখতে লড়ে যাচ্ছিলাম, ক্যারেন কীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তা পর্যবেক্ষণ করতে নয়।

“আমি প্রথম অভিযোগেই তর্ক করার প্রচেষ্টা করতে পারি না – যদিও আমি বলতে পারি এটা চমৎকার অসহ্যরকমের বাস্তব মনে হচ্ছে – কিন্তু দ্বিতীয়বার আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে। হ্যাঁ, জীবনে চলার পথে সবাই বদলে যায়, অবশ্যই বদলে যায়,” আমি চালিয়ে যাই, “কিন্তু তাই বলে আমরা ভিন্ন মানুষ হয়ে যাই না, আসলেই না।  আমাদের বাহ্যিক বেশ বদলে যায়, কিন্তু আমাদের ভেতরটা বদলায় না। জন প্রাইস সাধারণভাবে বেঁচে থেকে শেষে মরে পঁচে যেতে চায়নি, তাই আমি আজ এখানে। জন প্রাইস এই ধারণাটা আঁকড়ে ছিল, ওর মত বদলায়নি। যদি সে মত বদলাতো, সে তার অ্যাকাউন্টে ঢুকে একটা বোতাম টিপেই আমাকে মুছে দিতে পারতো। ও তেমনটি করেনি, এর অর্থ হলো যদিও তার আর আমার মাঝে বিশ বছরের জীবন-অভিজ্ঞতার পার্থক্য আছে তারপরও আমরা অত্যাবশ্যকভাবে একই মানুষ”।

এরপর ক্যারেন আরো কিছু বললো, তারপর আমি বললাম, কিন্তু আমাদের তর্ক , একই জিনিসকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে জুরি মন জয় করার চেষ্টা  ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে, এটা আসলে পুনরালোচনার বিষয়।

কিছুক্ষণ পর ঘণ্টা বেজে ওঠলে আমরা বিরতি নিলাম।

বিরতির সময় ক্যারেন আমার সাথে কিছু কথা ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাইলো এবং বোতাম টিপে তার অনুরোধ গ্রহণ করার পূর্বে আমি পুরো এক সেকেণ্ডের মত দ্বিধায় ছিলাম । বিরাট ভুল।

সে সোজাসুজি আমাকে বললো আমার সিদ্ধান্ত তুলে নিতে, ওকালতি বাদ দিতে আর জন প্রাইসকে বাঁচতে দিতে।

“ক্যারেন, সে আর বাঁচতে চায় না তা কি তুমি দেখতে পাচ্ছ না?” আমি তার কাছে জানতে চাই, “আমি তাকে মারতে চাইতাম না, কিন্তু ইশ্বরের দোহাই, আমিইতো সে।”

সে বলে, “দাম্ভিক কোথাকার, এমনভাবে কথা বলো না যেন তুমি আসলেই সে। তুমি সে নও।  তুমি মাদারবোর্ডে থাকা একগুচ্ছ সংকেত ছাড়া আর কিছুই নও। যখন এই প্রহসন শেষ হবে, কেউ একজন একটা বোতাম টিপে দেবে; আর এতটুকুই, তুমি শেষ হয়ে যাবে, কোনো দেহভষ্ম থাকবে না, কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থাকবে না, কারণ তুমি বাস্তব নও। আর তোমাকে আরো কিছু শোনাতে চাই, আমি পরোয়া করি না; যে মানুষটি বোতামটি চাপবে, সে আমিই হবো”।

“ছিঃ ক্যারেন! তুমি এত বাজে সিদ্ধান্ত কবে নিয়েছ?” আমি বললাম, আমার ভেতরটা মুষড়ে যাচ্ছিলো, “তুমি আগে কখনোই এমন ছিলে না। আগে কখনোই এত জঘন্য ছিলে না, কখনোই ছিলে না”।

আমি বুঝতে পারলাম আমার গলাও ধরে আসছে, আমার গাল বেয়ে নেমে আসা অশ্রু ভিডিও পর্দাকে অস্পষ্ট করে তুলছে। আসলে কৃত্রিম অভিশপ্ত কান্না।

আমি আবার তার দিকে তাকালে দেখি ক্যারেনের চেহারায় কিছু একটা পাল্‌টে গেছে। সেও হয়তো কাঁদছে।

সে ফিসফিসিয়ে বললো, “হায় ইশ্বর! জন, তুমি কি ভাবছো না যে এই ব্যাপারগুলোর পরে তোমাকে আবার দেখা, তুমি কেমন ছিলে তা দেখা আমার জন্য কতো কঠিন হবে?”

সে কথার খেই হারিয়ে ফেলছিলো, এরপর আবার শুরু করলো।

“তুমি তাকাও ঠিক সেভাবে যেভাবে সে তাকাতো, তুমি তাকাও তার মতো, বলো তার মতো। তুমি যেভাবে কথা বলছো… মনে হচ্ছে আমি প্রেতাত্মার সাথে দেখা করছি, ঠিক প্রেতাত্মার সাথে”।

তারপর সে এক হাত বের করে পর্দায় স্পর্শ করলো। আমি তার কাছে পৌছে গেলাম, যদিও আমি অনুভব করছি শীতল কাঁচের মতো।

“বাচ্চারা… টমি… সে তার বাবার এ অবস্থা সহ্য করতে পারছে না”। ক্যারেন পুরোপুরি আমার দিকে না তাকিয়ে বললো, “শেষের দিকে তাদের মাঝে অনেক খারাপ ব্যাপার ছিলো। ডিভোর্সের পরে, ব্যাপারগুলো আরো বেশি অগোছালো হতে লাগলো। এখন তার যাওয়ার কথা ছিলো…. শোনো, হয়তো জন জেগে ওঠবে না। হয়তো সে জেগে ওঠবে না। কিন্তু যদি সে এভাবে থাকতো তা টমিকে সুযোগ দিতো….. সুযোগ দিতো কিছু বলতে, এমনকি যদি কেউ নাও শোনে…… আমি জানি না, হয়তো শান্তি খুঁজে নেয়ার সুযোগ দিতো, অথবা …. অথবা অন্যকিছু”।

মনে হচ্ছে আমার সংকল্প হেরে যাচ্ছে।  আমি তাকে ভালোবাসি। কীভাবে আমি তাকে ‘না’ বলি? সে চায় আমি আমার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করি, তার কিংবা আমার ছেলেদের জন্য।

আমি চুলে অঙ্গুলি সঞ্চরণ করতে করতে বললাম, “শোনো” আমি বললাম, “শোনো, ঠিক আছে, আমি আমার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করলাম, এই মুহুর্তেই।  যদি টমির কিছু সময় লাগে, তাহলে ঠিক আছে, আমরা তাকে কিছু সময় দেবো।

এটা আমাকেও কিছু সময় দেবে। হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমি হয়তো একটা সুযোগ পেতে যাচ্ছি, শুধু ক্যারেন নারীটা কী হয়ে গেছে তা বোঝার জন্য নয়, আমার বাচ্চাদের বোঝার জন্যও। টমিকে বোঝার জন্যও।

“ধন্যবাদ, জন” সে বললো। সে আমার দিকে চেয়ে মৃদু হাসলো। আমি অভিবাদন জানিয়ে কম্পিউটার পর্দার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলাম।

পলকের জন্য ক্যারেনকে দেখা গিয়েই জনের হসপিটাল কক্ষের পরিচিত দৃশ্যটা বদলে গেলো। আমি দেখলাম তার বুক ধীরে ধীরে ওঠানামা করছে। আমি সিদ্ধান্তটি বাতিল করার পর, যেটি সে চাইতো, কিন্তু সেই মহিলাটি যাকে আমি ভালোবাসি সে চাইতো না, একজন ডাক্তার এসে তার ভালো হাতটিতে সুঁই দিয়ে ছিদ্র করে আরেকটা তরলের ব্যাগ ঝুলিয়ে দিলো যাতে সে পানিশূন্যতা ও মরে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। তার হাত কয়েক মিনিটের জন্য কেঁপে ওঠলো, এবং ডাক্তারটি একজন সহকারীকে ডেকে হাতটি চেপে ধরতে বললেন যখন তিনি সুঁই ফোটাচ্ছিলেন।

তার চোখের পাতা হালকা কেঁপে স্থির হয়ে গেলো।

আমি মরে যেতে ভয় পাচ্ছি না। আমি জানি যে আজ নয় কাল আমি জন এর উপর প্লাগটি টেনে দিতে যাচ্ছি, এবং যখন এটা আমি করবো আসলে আমি নিজের উপরই প্লাগটি টেনে দেবো। আমরা অ্যাডভান্স ডিরেকটিভরা এভাবে আমাদেরকে সৃষ্টিকারী আত্মা ব্যাতীত বেঁচে থাকার অধিকারটা উপভোগ করি না। যদিও ‘এডি’দের “বাস্তব” প্রতিরূপকে যতদূর সম্ভব জীবীত রাখার ইচ্ছাটা, যাতে তারা যতদূর সম্ভব নিজেদেরকে “জীবন্ত” (ডিজিটাল অর্থে ‘জঘন্য’) রাখতে পারে, প্রতিহত করায় একটা জটিলতা আছে।

তুমি কয়েক সপ্তাহ সময় পেয়েছ তোমার পথ বেছে নেয়ার, এইটাই বন্ধু, এরপর তোমার সময় শেষ।

ধরুন আমি বলতে চাইছি যে, ঠিক আছে, জন প্রাইস বেঁচে থাকতে চাইতো, প্লাগ টেনে দিও না। আমি আমার পছন্দমতো করতাম, হতে পারে তুচ্ছ ব্যাপার, তারপর আমি বন্ধ  হয়ে যেতাম, ঠিক একইভাবে যেন আমিই প্লাগ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। শুভবিদায় জন প্রাইস এডি। কেবল তফাৎ হলো, যদি আমি তাকে বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিতাম, আমাকে আবার জাগিয়ে ওঠানো হতে পারতো যদি তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হতো। যদি তার অবস্থা খারাপ মনে হতো, যদি অবস্থা যথেষ্ট পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে মনে হতো, উদাহরণস্বরুপ, ধরুন সে দ্বিতীয়বার স্ট্রোক করেছে অথবা অন্যকিছু, তখন পুনর্মূল্যায়নের জন্য আমাকে আবার ফিরিয়ে আনা হতো।

কিন্তু আমি কি মরে যেতে ভয় পাই? আমাকে কেনো এত ভয় পেতে হবে? এমনকি আমার কোনো বাস্তব অস্তিত্বও নাই; মানুষও খুব ভালোবাসে এটা বলতে। সত্য কথা হলো, আমি একটা প্রেতাত্মা। আসল মানুষটা হয় মরে গেছে বা মরে যাচ্ছে, আপনি যা মনে করেন। বাদ দেন, যদি আমি এসব নিয়ে খুব বেশি ভাবি, আমার মাথা ব্যথা করতে শুরু করে। আর এই ব্যথা যথেষ্ট বাস্তব মনে হয়; অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরেকটা ব্যাপার হলো আমি মাথা ব্যাথার প্রতিষেধক থেকেও এই প্রেতাত্মাময় সময়টা বরং ভালোভাবে কাটাই। আমার ছেলেকে দেখার মত, উদাহরণস্বরুপ।

সে জনকে দেখতে প্রায় প্রতিদিন আসে, ক্যারেনের চেয়েও বেশি আসে।

সে প্রায় পাশে এসে বসে থাকে, তেমন কথা বলে না। মাঝে মাঝে সে জনের ভালো হাতটা ধরে। একবার দুইবার সে জনকে পড়ার চেষ্টা করে, এবং আমি মনে করি সে এ ব্যাপারে আত্মসচেতন তাই সে এভাবে বেশিক্ষণ থাকেনা। “ফ্লাওয়ার্স ফর অ্যালগারনন” বইটি সে পড়তে চেষ্টা করে, সেটা কয়েক হাজার বছর আগের একটি বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীর বই। বইটির কথা আমার মনে পড়ে, টমির বয়সে এই বইটা আমার বেশ ভালো লাগতো। বইটি চার্লি নামের একটা লোক সম্পর্কে, যে কঠিন কঠিন জিনিস শিখছিলো।    

সে একটা অস্ত্রোপচার করেছিলো তাকে সুদর্শন দেখানোর জন্য। এটা কাজ করেছিলো, – আসলে, সে অতি সুদর্শন হয়ে গিয়েছিলো – কিন্তু তারপর, কিছুক্ষণ পর সে আগে যেরকম ছিলো তার থেকেও কুৎসিত হয়ে গেলো।  এটা মজার ব্যাপার, আমি গোলকধাঁধায় পড়ে যেতাম কোনটা আসল চার্লি সেটা ভেবে – সে কি বেকুব ছিলো, নাকি বুদ্ধিমান, নাকি অন্যকিছু? সে যখন মরে গেলো আর স্বর্গযাত্রা করলো তখন কোনটি স্বর্গে গিয়েছিলো, আসলটা না নকলটা?

এখন আদালতের মামলা মিটে গেছে, আমি সম্ভবত ক্যারেন কিংবা আর কারো সাথে আর কথা বলবো না। কিন্তু এটা কোনো প্রকৃত নিয়ম নয় – যেমন ক্যারেন বলেছিলো, নকল অ্যাডভান্স ডিরেকটিভদের ব্যাবহারের যে নিয়ম তা হাস্যকরভাবে দূর্বল – শেষে আমি নিজেকে সহায়তা করতে পারবো না।

“টমি, তুমি কী ভাবছো?” আমি একদিন একটা স্পীকারের মাধ্যমে বলি,  যখন আমি তার অবিরাম গম্ভীর নিরবতা আর সহ্য করতে পারছিলাম না।

১০

সে নিরুত্তর, এমনকি শুরুও করেনি। এমন ভাব যেনো আমি সেখানে আগে থেকেই ছিলাম – অবশ্যই সে জানতো আমি সেখানে ছিলাম, আমি আর কোন মুল্লুকে যাবো? – এবং  সে আমাকে কিছু বলার জন্য অপেক্ষা করতো।

সে অনেকক্ষণ নিরুত্তর থাকে এবং আমি উদ্বিগ্ন হতে শুরু করি যে, হয়তো সে কিছুই বলবে না, যেন সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ম মেনে চলবে আর আমাকে একেবারে বিরক্ত করবে না।

“আমি চিন্তা করছি… কিভাবে সব এভাবে শেষ হওয়ার জন্য বদলে গেলো?” সে হটাৎ বললো, “যখন আমি একটা ছোট্ট বাচ্চা ছিলাম, আমরা খুব কাছে ছিলাম। আমি আতঙ্কে ছিলাম যে তখন কী হতো যখন তুমি…. যখন সে মরে যেতো। আমি সত্যি এ ব্যাপারে ভাবতাম। তারপর আমি দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতাম…. তাকে…. আমি তাকে খুব জোরে আঁকড়ে ধরতাম।

আর এখন, এই অবস্থা। হাসপাতাল রুমে বসে থাকা, কিছুই বলতে না পারা… আমি নিশ্চিতও না আমি শেষ তাকে কবে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমরা… ডিভোর্স পর্যন্ত অনেক সংগ্রাম করেছিলাম। আসলে, ডিভোর্সের পুর্বে পর্যন্ত। তাই আমি মনে হয় চিন্তা করছি কীভাবে ‘ক’, ‘খ’ এর উপর রাগ করতে পারে; যেখানে প্রকৃতপক্ষে একটা মুহুর্তও নেই যে আমি নির্দেশ করি আর বলি; এই আরকি, এই হয় যখন সবকিছু বদলে যায়”।

নীরবতা ভাঙে।

“আমি কি একজন ভালো বাবা ছিলাম?” আমি ঘটনাক্রমে জানতে চাই। আমাকে জানতেই হতো।

“হ্যাঁ, ছিলেন” আমি দেখতে পাই তার চোখের কোণায় জল জমতে শুরু করেছে। “আপনি চমৎকার একজন বাবা ছিলেন। আমি আপনাকে খুব ভালোবাসতাম। পরবর্তীতে যাই ঘটুক না কেনো, বাবা হিসেবে আপনি চমৎকার ছিলেন”।

হঠাৎ সে ওঠে সামনে ঝুঁকে জনের কপালে চুমু খায়। তারপর সে কোনো শব্দ ছাড়াই ঘুরে চলে যায়।

পরদিন ক্যারেন হাসপাতালে আসে, কিন্তু সে জনকে দেখতে আসেনি, আমাকে দেখতে এসেছে।

“টমি বললো সে তোমার সাথে কথা বলেছে,” সে আমাকে বলে, “আমার মনে হয় এটা তার জন্য ভালোই হয়েছে। আমার মনে হয় না সে আবার আসবে”।

অনেক্ষণ নীরবতা ছিলো। আমি জানি এর মানে কী। আমি জানি সে এখানে কেনো এসেছে।

১১

আমার সন্দেহ হয় যে আমার কি এই প্রশ্নটা করা উচিৎ হবে, যে প্রশ্ন করতে আমি আকুল হয়ে আছি। তা করা কি ঠিক হবে? কিন্তু তখন আমি মরে যেতে বসছি, সম্ভবত বেশি হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। কেনো এই প্রশ্নটা করা উচিত হবে না?

“ক্যারেন, এটা কি ভিন্ন কিছু হতে পারতো?” আমি বলি, “আমার ধারণা…ব্যাপারগুলো খুব আশাব্যঞ্জক দেখাতো। এগুলো কি এভাবেই শেষ হয়ে যেতো?”

“তোমার ভুলে যাওয়া উচিত নয়, আমাদের ভালো সময়ও কেটেছে। প্রচুর সময়”। তার চোখের কিনারায় পানি, “এগুলো শেষের দিকে এসে ফুরিয়ে গেছে, একভাবে বা অন্যভাবে। ব্যাপারগুলো শেষ হয়ে গেছে”।

“আমি এগুলোকে আবার ফিরে পাবার আগেই এভাবে উচ্ছন্নে যেতে দিতাম না!” শব্দগুলো লাফিয়ে ওঠছিলো। আমার থামা উচিৎ, তার সাথে এভাবে কথা বলা ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু আমি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না।

“সে কীভাবে তোমাদেরকে এরকম কষ্ট দিতে পারতো, সবকিছুকে ছারখার করে দিতো, সবকিছুতেই  সদর্পে গোল পাকাতো? আমি তাকে মেরে ফেলতে চাই, আমি তাকে মেরে ফেলতে চাই, ক্যারেন।  আমি আমাদের উভয়কে ক্ষান্ত দিতে চাই।”

সে ম্লান হাসি দিলো। আমার পর্দায় চুম্বন করলো। কিছু লিপস্টিক লেপটে গেলো কাঁচে, এরপর পুরো পৃথিবী অস্পষ্ট হয়ে গেলো।

“চলে যাবার সময় হয়েছে, জন,” সে বলে, “কিন্তু দয়া করে, ঘৃণার দৃষ্টিতে এটা করো না। এটা করো, কিন্তু ঘৃণায় নয়। কিছু ভালো সময় ছিলো, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি।  তুমি ভালো কাজ করেছিলে”।

সে বিছানায় ঝুঁকে পড়লো , আর তার কপালে চুম্বনও করলো।

তারপর সে কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়ালো, আর রুমের দিকে হাঁটা দিলো। সে ঠিক। সে যদি তাকে ক্ষমা করতে পারে, আমি কেনো পারবো না? আমি কোডটি টাইপ করলাম, এবং এবার ক্যারেনের কোনো পাল্‌টা নির্দেশনা ছিলো না।

জন প্রায় মরে গেছে।

আমি অবাক হবো যদি কম্পিউটার সিমুলেশান স্বর্গে যায়। সর্বোপরি, ঈশ্বর নিউরন ও ডায়োডের পার্থক্যের জন্য আসলেই কি কাউকে পরোয়া করবেন?

১২

সম্ভবত স্বর্গে সম্ভাব্য প্রতিটা মানুষের একটি করে সংস্করণ রয়েছে। আমরা সব মানুষ সেখানে থাকতে পারতাম, যদি আমরা ডানে না গিয়ে বামে যেতাম, অথবা ঘরে ফেরার আগে কম বিয়ার পান করতাম, যদি তাদের উপর ছেড়ে না দিয়ে আমরাই বরং ব্যাপারগুলোকে বুঝতে পারতাম।

কিছু একটা টিপটিপ করছে, আর পুরো স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে গেছে।

[মূল গল্প]

প্রত্যুত্তর দিন

আপনার ইমেইল প্রকাশিত হবে না। Required fields are marked *