ভয়ংকর এক প্রথা ‘স্তন পিষে ফেলা’র ভুক্তভোগীদের গল্প

ভয়ংকর এক প্রথা ‘স্তন পিষে ফেলা’র ভুক্তভোগীদের গল্প

(ভাইস ফ্রান্স-VICE FRANCE থেকে প্রকাশিত।)

“স্তন পিষে ফেলা”-অধিকাংশ ক্যামেরুন বাসীদের কাছে এটি একটি প্রথা। যুবতী মেয়েদের বেড়ে ওঠা স্তন পিষে ফেলার জন্যে তাদের বক্ষে গরম যন্ত্রাদি বিশেষ করে খুন্তি, চমস বা মুষল, মুগুর ইত্যাদি দিয়ে মর্দন করা হয়। যুবতীরা যাতে তাদের শারীরিক সম্পর্ক আরো দেরিতে করে এর জন্য উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় পুরুষদের কাছে তাদের দেহের আকর্ষণীয়তা কমানো হয়। পিতামাতা এই ভেবে উদ্বিগ্ন থাকেন যে, তাদের মেয়েরা যদি কোন পুরুষের সান্নিধ্যে আসে তাহলে তারা গর্ভধারণ করবে এবং ফলস্বরূপ তাদের পড়াশুনাটাও শেষ হবে না।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের নারী সদস্যরাই স্তন ল্যাপটানো বা পিষে ফেলার কাজটা করে থাকে।অনেক সময় এটা করার জন্য চিকিৎসক বা বৈদ্যের সাহায্যও নেয়া হয়। মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিতে পা দেয় তখনই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়, তবে কিছু কিছু মেয়ের ক্ষেত্রে আট বছর বয়স হওয়া মাত্রই শুরু হয়ে যায়।এই প্রক্রিয়ার ফলে পরবর্তীতে খুবই ভয়ংকর রকমের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগতে হয় ঐ মেয়েগুলোকে, যেমনঃ সিস্ট, ব্রেস্ট ক্যান্সার, বাচ্চাদের দুধ পান করাতে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতা ইত্যাদি। তাছাড়া এর দরুন তারা যে ভীষণ ভাবে মানসিক ব্যাধিতে ভুগতে থাকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১১ সালে গিজের (GIZ) দেয়া বিবরণ অনুযায়ী ক্যামেরুনের প্রতি দশজন বালিকার মধ্যে একজন এই “স্তন পিষে ফেলা” রীতির সম্মুখীন হয় এবং সেটা পুরোপুরিই জোরপূর্বক ভাবে।

ফরাসী ফটোগ্রাফার Gildas Paré সম্প্রতি ক্যামেরুন ভ্রমণ করেন ঐসব নারীদের ছবি এবং তাদের শোচনীয় অবস্থার বর্ণনা সংগ্রহের নিমত্তে।

ভাইস ফ্রান্সের সাংবাদিক তাঁর সাথে এই বিষয়ে কিছু কথা বলেন।

Vice: আপনি তো মূলত খাদ্যসামগ্রীর ছবি তুলতেন? তাহলে এইরকম চরিত্রচিত্র গুলো ধারণ করার প্রেরণা কোত্থেকে আসলো?

Gildas Paré: আমি স্বাধীনভাবে কিছু কাজ করতে চেয়েছিলাম এবং আমার ইচ্ছা ছিল চারপাশের নারীদের যে সমস্যা তা নিয়ে এগোনো।ব্রেস্ট আইরোনিং -“স্তন চূর্ণিত করা” বা “স্তন পিষে ফেলা” এই রকম একটি ভয়ংকর প্রথার ওপর তেমন কোনো তথ্যচিত্র নেই, এটা দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হই। কিছু অনুসন্ধান করার পর জানতে পারি ক্রিক বায়্যামা নামে এক সাংবাদিক এই বিষয়ের ওপর তথ্যচিত্র ধারণ করছিলো, তারপর আমি তাঁর সাথে যোগাযোগ করি এবং কয়েক মাস পর আমরা একসাথেই ক্যামেরুন যাই।

Vice: এই রীতি’টা সম্পর্কে কিছু বলুন?

Gildas Paré: ধারণাটা হলো এমন, যদি আপনার (মেয়েদের) স্তন বৃদ্ধি না পায় তাহলে পুরুষরা আপনার (মেয়েদের) প্রতি আকৃষ্ট হবে না। মায়েরা তাদের মেয়ে সন্তানদের দ্রুত গর্ভবতী হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং তারা যেনো পড়াশুনা ঠিকভাবে চালিয়ে যায় এই আশায় নিষ্ঠুর ঐ প্রথাটি মেনে চলে।যদি কেউ তাদের (মেয়েদের) প্রতি আকৃষ্ট না হয়,তবে তাদের দ্রুত বিয়ে হবেনা এবং এদিকে পড়াশুনাটাও ঠিক মত চলবে।

Vice: এটা কীভাবে কাজ করে?

Gildas Paré: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রথার কার্যক্রম শুরু করা হয় সাধারণত আট কিংবা নয় বছর বয়েসী বাচ্চা মেয়েদের ওপর। তাদের বক্ষে টানটান করে একটি ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ(স্থিতিস্থাপক পট্টি) মোড়ানো হয়। রাতে পট্টিকা’টা আরো টানটান করে বাঁধা হয়, এমনকি মাঝে মাঝে দিনেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। আরেকটি পদ্ধতি হলো গরম যন্ত্রাদি দিয়ে বুকে জোরে মালিশ করা। ধারনা করা হয়,এইসব যন্ত্রাদিতে তাপ দিয়ে বক্ষে চাপতে থাকলে ওখানকার চর্বি গলে যায়। ভাবুন! কতটা বিকারগ্রস্ত এই মানুষগুলো। তারা অনেক ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে যেমনঃ মুষল, কাঠের দন্ড বা লাঠী, চমস, খুন্তি,পাথর ইত্যদি।বেশির ভাগ যন্ত্রই তাদের মা অথবা দাদি নানির তত্ত্বাবধায়নে আগে থেকেই থাকে।

ছবিগুলোতে প্রতিটি নারীই বক্ষ উন্মুক্ত রেখেছে। তাদেরকে এমন করে উপস্থাপনের জন্য রাজি করানোটা কি খুব সহজ ছিল? মোটেই না, অনেক কষ্ট করে মানাতে হয়েছিল। নারী অধিকার বিষয়ক একটি এনজিও “রেনেটা” তারা আমাদেরকে এ ব্যাপারে বেশ সাহায্য করেছিল।রেনেটার বরাতে একজন ভুক্তভোগী নারী আমাদেরকে জানায় এটা কখনোই সম্ভব হবে না। আপনি তাদের চেহারার ছবি নতুবা বক্ষের ছবি যে কোনো একটা তুলতে পারবেন, দুটো একত্রে না। তারা (ভুক্তভোগিরা) কখনোই এই প্রস্তাবে রাজি হবে না। আমি তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে যদি আমি এইভাবে উপস্থাপন না করি তবে এই তথ্যচিত্র ক’রে কারো টনক নাড়ানো যাবে না। বস্ত্র পরিধেয় একজন নারীর জায়গায় খালি গাত্রের নারীকে এক্ষেত্রে উপস্থাপন করলে আঘাত টা আরো জোরে লাগবে এই সমাজের ওপর। অনেকক্ষণ যাবত এই নিয়ে কথাবার্তা চলার পর শেষমেশ তারা রাজি হয়। আমার উদ্দেশ্যটা যে কোনো ধরনের যৌনতার সাথে সম্পর্কিত না এবং আমার অন্তরের দৃশ্যে তাদের জন্যে যে সুন্দর উপলব্ধির চিত্র আঁকা আছে – এক পর্যায়ে তারা সেটা বুঝতে পারেন।

Vice: আপনি কি শুরু থেকেই চেয়েছিলেন তাদের পোশাকহীন ছবি ধারণ করতে?

Gildas Paré: হ্যাঁ অবশ্যই, অন্যথায় লোকজনের কাছে এর তাৎপর্যটা জোরালো আকারে প্রকাশ করা যাবে না। তাছাড়া উন্মুক্ত বক্ষযুগল মানুষের মস্তিস্ককে অনেক শক্তভাবে আঘাত করতে পারে।

Vice: নিজ শরীরের সাথে তাদের সম্পর্কটা কীরূপ?

Gildas Paré: তারা প্রতিনিয়ত ভুগছে। তারা সাঁতারের আঁটসাঁট পোশাকে অস্বস্তি বোধ করে বিধায় সমুদ্রে সৈকতে যায় না।তাদের জন্য নগ্ন হওয়াটা অনেক ভীতিকর অবস্থায় রূপ নিয়েছে এমনকি প্রিয়জনের (প্রেমিক বা স্বামী) সাথে কাটানো একান্ত মুহূর্তেও। শারীরিক যন্ত্রণা মুছে গেলেও মানসিক আঘাত এত সহজে দূর হয় না। অনেকেই চায় না তাদের বুকে কেউ কখনো স্পর্শ করুক।

Vice: আপনার কাজটির নাম “কৃত্রিম স্বপ্ন” কেন?

Gildas Paré: তারা সবাই প্লাস্টিক সার্জারি করার জন্যে ব্যাকুল।তারা প্রচুর টাকা আয় করতে চায়, যেটা দিয়ে ব্রেস্ট অপারেশনের খরচ মেটানো যাবে। তারা সুন্দর পোশাক পড়ে ঘুরতে যেতে চায়, নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে চায়। কিন্তু আপাতত তারা নিজেদের গুঁটিয়ে রেখেছে।এই মানসিক অবস্থাটা সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক।

আমি যখন যাই ওখানে তখন কিছু ধারনা পুষে নিয়েছিলাম যে তাদের শরীরে অনেক ক্ষতচিহ্ন দেখবো হয়তো কিন্তু শেষমেশ দেখলাম, মূলত তারা মানসিক ভাবে আহত। সবাই তারা ঐ ঘটনার পরবর্তী সময় গুলোর মানসিক বিপর্যস্ততার কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। এসব শুনে আমি কিছুটা ভেঙে পড়ি।

Vice: এমন কোনো কাহিনী কি ছিল যেটা আপনাকে ভীষণ নাড়া দিয়েছে?

Gildas Paré: প্রতিটা গল্পই অনেক মর্মান্তিক ছিল। যদিও তাদের শারীরিক ক্ষত এতটা অবলোকিত হচ্ছিলো না, তবে তারা ভেতরে ভেতরে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল।একটি মেয়ের কথা বলি তাকে প্রচুর কষ্ট করতে হয়, প্রথমে তার বক্ষ খুন্তি দিয়ে ডলা হয়,পরে পাথর দিয়ে,তারপর ধর্ষণ করা হয় এবং শেষে একটা লোকের সাথে তার অমতে বিয়েও দেয়া হয়।মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তাঁর একটি সন্তান ছিল।

ক্যামেরুনে তুমি যদি তোমার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে না পারো তাহলে অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়। মাতৃ দুধ ভিন্ন অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর তেমন কিছুই মার্কেটে পাওয়া যায় না। যদি মেয়েটি বাচ্চাকে বুকের দুধ দিতে অক্ষম হয় তবে তারা একধরনের পিঁপড়া স্তনের ওপর ছেড়ে দেয় যাতে করে ওদের কামড় তথা আল বেঁধানো বিষের মাধ্যমে স্তন ফুলেফেঁপে দুধ উৎপাদিত হয়।অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি কাহিনী।

Vice: এটা নিয়ে আপনার পরবর্তী ভাবনা কী?

Gildas Paré: এই প্রজেক্টটি প্রদর্শন করার জন্য ভাল জায়গা খুঁজছি আপাতত। একটি গ্যালারির সাথে কথাবার্তাও চলছে। আমি ক্যামেরুনে আবারও যেতে চাই, আরো তথ্যউপাত্তের চিত্র ধারণ করতে।

ছবি -১ (১৮+)

স্তন থাকাটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ছিল। আমি যখন দশে পা দেই, তখন আমার দাদী আমার স্তন বেড়ে ওঠা লক্ষ্য করেন।একদিন রাতে,সে আমাকে আগুনে ঘেরা একটি বাঁশের বিছানায় শুইয়ে দেন।তারপর কাঠের তৈরি গরম খুন্তি বা চমস দিয়ে আমার স্তনগুলো চাপতে থাকলো এবং চ্যাপ্টা করার চেষ্টা করলো।এরপর থেকে এখন অব্দি, আমি মোটেও চাইনা কেউ আমার বক্ষ স্পর্শ করুক। – Jeannette, 28 years old.

একটি কাঠের তৈরি চমস বা খুন্তি এটা স্তন চ্যাপ্টা করার কাজে ব্যবহৃত হয়।।

ছবি – ২ (১৮+)

তারা বলে, “চিৎকার করো না, এটা তোমার মঙ্গলের জন্যই করা হচ্ছে।” সন্তানদের সামনে এই বিষয়ে কথা বলার সাহস এখনো আমার হয় নি।তিনদিন আগে আমার ছেলে বললো “মা, তোমার স্তন ছোট কেন?” আমি এড়িয়ে গেলাম বললাম জানিনা।আমারও একটি ছয় বছর বয়সী মেয়ে আছে।কিন্তু আমি এখনো নিজেকে প্রস্তুত করতে পারিনি তাকে এসব বলার জন্য।এই ভবিষ্যৎ দেশপ্রধানকে বুকের দুধ পান করাতে পারলে আমি অনেক খুশি হতাম। –Carole N., 28 years old.

ছবি – ৩ (১৮+)

আমার বুক যখন বাড়তে থাকে বাড়ির সবাই এই বিষয়ে কথা বলা শুরু করলো। প্রতিবেশীরা, আমার মা’র বান্ধবীরা, আশেপাশের বড়রা –সবাই অনেক কানাকানি শুরু করে দিল।এমনকি লোকের কথায় আমিও অনেক লজ্জা পেতাম।অবশেষে আমার মা আমার বেড়ে ওঠা স্তন পিষে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো। মা বললো, “যদি তোমার এটা পিষে না ফেলি তাহলে পুরুষরা আকৃষ্ট হবে এর দ্বারা এবং তুমি নিশ্চয়ই জানো পুরুষ হচ্ছে গর্ভধারণ ঘটানোর প্রধান উপকরণ।” মা জোর গলায় বলে উঠলো তোমার এই স্তনযুগল কে পিষতেই হবে।সে গরম পাথর দিয়ে প্রথমে আমার ডান স্তন,পরে বাম এভাবে ডান বাম করে কয়েক সপ্তাহ ধরে পিষতে লাগলো।আচ্ছা আমি বিশ্বাস করলাম যে আমার মায়ের উদ্দেশ্য ভাল ছিল।যদিও স্তন নারীকে সুন্দর করে,তবে আমার গুলো আজ থলথলে ম্লান হয়ে গেছে,স্তনগুলো আর দৃঢ় থাকতে পারছেনা, ঝুলে যাচ্ছে। –Carole B., 28 years old.

বেরি ফলের বীচিও স্তন চ্যাপ্টানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। মা-দাদীরা এটা গরম করে এবং বুকের ওপর পিষতে থাকে।

ছবি – ৪ (১৮+)

আমার বয়স তখন আট, একদিন আমার মা বললো তোমার জামা খোলো। তোমার বক্ষ দেখি এখনি বড় হচ্ছে? ‘যখন তোমার বয়সী কোনো মেয়ের বক্ষ বাড়ে ,তখন তাদের দিকে ছেলেরা লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকায়।’ আমি কিছুই বুঝতে পারিনি সে কী করছে বা কী বলছে! প্রতিদিন অন্তত একবার,এমনকি মাঝেমাঝে দিনে তিনবার সে আমার বুকে গরম খুন্তি দিয়ে চাপ দিতো। সে শুধু বলতো এটা তোমার মঙ্গলের জন্যেই করা। দিনগুলো দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। আমি লক্ষ্য করলাম আমার মা যতই পিষতো স্তন ততই বড় হতে থাকতো। যখন সে দেখলো গরম খুন্তিতে কাজ হচ্ছে না তখন সে পাথর দিয়ে চাপার সিদ্ধান্ত নিলো। এটা একটা নরকের মত ছিল, আমার মনে হতো আমি আগুনে ডুবে আছি। মানসিক সমস্যা দূর করার পরামর্শ দেয় এমন একজনকে আমি সব খুলে বলে, সে মা’কে বুঝিয়ে এই গর্হিত কাজটি বন্ধ করায়। আমি বেশ খুশী হলাম ভাবলাম অবশেষে যন্ত্রণার মুক্তি ঘটলো। কিন্তু সে আবার শুরু করলো, এবার ফলের বীচি গরম করে ডলতে লাগলো। সে অনবরত পিষে যাচ্চিলো। আমি দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে যাই। মাঝেমাঝে আমি আমার মা’র বিষয়টাও বোঝার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি চমকে উঠি যখনই আয়নায় নিজেকে দেখি। –Doriane, 19 years old.

ছবি – ৫ (১৮+)

আমার স্তন অবশেষে বাড়তে লাগলো যখন বয়স আঠারো হলো। তার আগ পর্যন্ত ছেলেরা আমার দিকে তাকাতো না। এতে সত্যিই আমার অনেক খারাপ লাগতো। আমার দাদী আমার বক্ষ পিষতে শুরু করে যখন আমি মাত্র বারোতে পা দেই। আমি পালানোর চেষ্টা করতাম প্রতি সকালে কিন্তু সে ধরে ফেলতো। যখন অন্য বাচ্চারা স্কুলে যেত তখন আমি গরম পাথরের চাপ সহ্য করতাম। দাদী প্রতিদিন দুইবার করে প্রায় একবছর এমনটা করেছে।স্তন থাকাটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার, যখন আমার স্তন ছিল না তখন আমি নিজেকে ছেলে ভাবতাম। –Agnès, 32 years old.

ছবি – ৬ (১৮+)

মুষল বা মুগুর, আমার ছোটবেলার যন্ত্রণার কথা মনে করিয়ে দেয়। যে পাথর দিয়ে মানুষ বিভিন্ন বস্তু চূর্ণ করে সেই একই পাথর আবার মেয়েদের সৌন্দর্য গুঁড়িয়ে দিতে এবং যুবতীদের চামড়া নিস্তেজ করে দিতে ব্যবহৃত হয়। আমার বক্ষ দশ বছর বয়সেই বাড়তে থাকে এবং আমার বাবামা ভাবলো পিষে ফেলাই একমাত্র সমাধান। ষোলো বছর বয়সে আমি গর্ভবতী হই, আমি যখনই বাচ্চাকে বুকের দুধ দেয়ার চেষ্টা করতাম প্রতিবারই কালো ধরনের তরল বের হতো। এগুলো মনে পড়লে গা শিয়রে ওঠে। আমি এসব ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আর মেয়েদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করলাম। –Cathy, 27 years old.

ছবি – ৭ (১৮+)

স্কুলে যাবার আগে প্রতিদিন সকালে আমার মা আমার কামিজ খুলে দেখতেন তার বেঁধে দেয়া পট্টি টা আমি খুলেছে কিনা। দুই বছর হয়ে গেছে এবং সে এখন অব্দি নিয়মিত এই কাজটি করেন। এটা আমার জন্য অবমাননাকর। আমি চাই সে এমনটা করা বন্ধ করুক। বড় হয়ে আমি উকিল বা পিয়ানো বাদক হতে চাই। আশা করি এই পট্টি আমার পড়াশুনায় তেমন ক্ষতি করবে না। –Cindy, 14 years old.

স্তন বেড়ে যাওয়া রোধ করতে এই ইলাস্টিক পট্টি ব্যবহৃত হয়।

DORYLUS-এদেরকে ড্রাইভার পিঁপড়া বলা হয়। বুকের দুধ উৎপাদনে এদেরকে উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ছবি – ৮ (১৮+)

তিনি আমার মা,তাই যখনই তিনি আমাকে ডাকতেন আমাকে শুনতেই হতো। আমি দৌড়ে পালাতে গেলে,ঘুমোতে গেলে,গোসলে গেলে অর্থাৎ যে অবস্থাতেই থাকি না কেনো সে আমাকে ধরে ফেলতো এবং পাষণ্ডের মত আমার বুক পিষতে থাকতো। আমি ব্যাথায় চিৎকার করে কাঁদলেও সে কোনো ভাবেই পেষা বন্ধ করতো না। আমার মনে হতো সে আমার বুকে ছুরি চালাচ্ছে অবিরত। আমার মা এখন মৃত। আমি কখনোই বুঝিনি যে আমার মা কি ভাবতো, কি চিন্তা তার মাথায় ঘুরতো, সে কি আমায় সাহায্য করছিলো নাকি শাস্তি দিচ্ছিলো। আমার চাচাতো ভাই আমাকে ধর্ষণ করে,তখন আমার বয়স মাত্র ১৩। শেষ পর্যন্ত আমি তার সন্তান জন্ম দেই। বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য বুকের দুধ আমার ছিল না, এমনকি আমার স্তনই ঠিকমত ছিল না পিষে ফেলার কারনে। আমরা বিষাক্ত এক পিঁপড়া ব্যবহারের চেষ্টা করি। যখন এটা স্তনে হুল বিঁধিয়ে দেয় তখন স্তন স্ফীত অর্থাৎ ফুলে যায় এবং মনে করা হয় এভাবে দুধ আনা যায় স্তনে। আমার তিন সন্তান, পিঁপড়াবিদ্যা সত্ত্বেও আমি ওদের কাউকেই বুকের দুধ খাওয়াতে পারিনি। –Emmanuelle, 23 years old.

ছবি – ৯ (১৮+)

এক রাতে আমার মা আমার বুকে খুব শক্ত করে একটি ইলাস্টিক ব্যান্ড বেঁধে দিলো। সেদিন থেকে সে আমার বুক পিষতে থাকে কখনো খুন্তি, কখনো মুষল, আবার পাথর কিংবা লাঠি দিয়ে,আমার খুব যন্ত্রণা হতো। আমি তাকে এমনটা না করার অনুরোধ করতাম,অবশেষে সে বন্ধ করে। কিন্তু এই ঘটনার পর আমার স্তন খুব দ্রুত বাড়তে থাকে, অনেক দ্রুত। আমি খুব লজ্জা পেতাম। আমি লুকাতে চাইতাম এগুলো। রাস্তাঘাটে লোকজন আমাকে এবং আমার স্তন লক্ষ্য করে চেঁচাতো,উপহাস করতো। মাত্র বিশ বছর বয়সেই আমার স্তনগুলো পঞ্চাশ বছর বয়সী বৃদ্ধার স্তনের মতো ঝুলে যেতে লাগলো। মাঝেমাঝে আমি কামিজ পড়েই আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে অন্তরঙ্গ হই। আমার লজ্জা করে নগ্ন হতে। আমার মায়ের ওপর আমার প্রচন্ড ক্ষোভ । – Gaëlle, 26 years old.

বাসায় তৈরি ইলাস্টিক বা স্থিতিস্থাপক পট্টি

এত টানটান করে পট্টি বাঁধা যে মাঝেমাঝে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না। আমি এতে অনেক ভয় পাই। বছর খানেক ধরে এটা বাঁধা আমার বুকে।এটা অসহ্য গরম, এটার নিচে সমস্ত জায়গায় দাগ হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারিনা আমার মা কেন এমন করছে আমার সাথে। –Manuella, nine years old.

মুষল বা হামানিদিস্তার বা মুগুর

ছবি – ১০ (১৮+)

আমার মা বলতো যে আমার বক্ষ ছেলেদের আকৃষ্ট করতে পারে। তাই সে আমাকে একজন বৈদ্য বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলো, তিনিও এই প্রথায় বিশ্বাসি ছিলেন। সে একটি ছুরি দিয়ে আমার স্তনদুটো কেটে ফেললো এবং ফাঁপানল দিয়ে ভেতরের সব শুষে নিচ্ছিলো। সে আমাকে বললো তুমি যদি বক্ষ না পিষে ফেলো তবে লোকে ভাববে তুমি একজন পতিতা। আমি ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে পড়ি। এই ব্যাথা সারতে অনেক সময় লেগেছে। স্তনগুলো তো ঈশ্বরের তরফ থেকে উপহার। তাই না! –Lisette, 34 years old.

চূর্ণ করার পাথর

একজন বৈদ্য

7 thoughts on “ভয়ংকর এক প্রথা ‘স্তন পিষে ফেলা’র ভুক্তভোগীদের গল্প

  1. ট্যাবুগুলো মানুষের জীবনের জন্য বেশিরভাগক্ষেত্রেই অভিশাপস্বরূপ। প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করাটাই ক্ষতির কারন হতে পারে, এই সহজ বিষয়টা অনেকেই মানে না। পোস্টে পাঁচ তারা দাগালাম।

  2. এত কিছু করার পরও সেখানকার মেয়েরা নিজেদেরকে, সেখানকার নিকৃষ্ট পুরুষদের হাত থেকে রাক্ষা করতে পারে নি। সত্যিকার অর্থে, তারা কি নিজেদেরকে সুস্থ স্বাভাবিক দাবী করে, আর তথাকথিত এই বর্তমান সভ্য সমাজ এই রকম একটা অমানবিক কাজকে কিভাবে দিনের পর দিন অনুমোদন দিয়েছে, আমার কল্পনাতীত। আসলে কি বলব এখনো বুঝে উঠতে পারছি না, নিজের সমস্ত অনুভূতি অসার হয়ে যাচ্ছে ওই হতভাগ্য নারীদের জন্য। বিশ্ব মানবিকতার দিকে আজ ওই নারীরা থু থু মারলেও হয়তবা কম হবে।

  3. এরা কি মানুষ, একজন সুস্থ মানুষ কী রে এমনটা করতে পারে। ভয়ংকর, সত্যি ভয়ংকর।
    এত কিছু করার পরও সেখানকার মেয়েরা নিজেদেরকে, সেখানকার নিকৃষ্ট পুরুষদের হাত থেকে রাক্ষা করতে পারে নি। সত্যিকার অর্থে, তারা কি নিজেদেরকে সুস্থ স্বাভাবিক দাবী করে, আর তথাকথিত এই বর্তমান সভ্য সমাজ এই রকম একটা অমানবিক কাজকে কিভাবে দিনের পর দিন অনুমোদন দিয়েছে, আমার কল্পনাতীত। আসলে কি বলব এখনো বুঝে উঠতে পারছি না, নিজের সমস্ত অনুভূতি অসার হয়ে যাচ্ছে ওই হতভাগ্য নারীদের জন্য। বিশ্ব মানবিকতার দিকে আজ ওই নারীরা থু থু মারলেও হয়তবা কম হবে।

প্রত্যুত্তর দিন Tanvir প্রতিউত্তর নাকচ করে দিন

আপনার ইমেইল প্রকাশিত হবে না। Required fields are marked *