আমি কিন্তু খুব সহজেই কেঁদে ফেলি – পাওলো কোয়েলহো

পাওলো কোয়েলহো-র ছবি

বর্তমান সময়ের লেখকদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহো। কোয়েলহোর সবচে’ বিখ্যাত বই দি অ্যালকেমিস্ট ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পাবার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬৯টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তাঁর এ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছিলো ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন, ১২ জানুয়ারী, ২০১২ তারিখে। ব্যক্তি জীবনে কেমন মানুষ পাওলো কোয়েলহো? এ বিশটি প্রশ্নে তার পুরোপুরি জবাব না মিললেও কিছুটা চেনা যাবে প্রিয় লেখককে…

পাওলো কোয়েলহো-র ছবি
পাওলো কোয়েলহো

ইন্ডিপেন্ডেন্ট : আপনার বাবা-মা সম্পর্কে কিছু বলুন-

পাওলো কোয়েলহো : উনাদের সম্পর্কে তেমন কিছু বলার নেই। আমার লেখক হবার কথা শুনে আমার বাবা-মা এতোটাই আশাহত হয়ে গিয়েছিলেন যে তারা আমাকে তিন-তিনবার মানসিক হাসপাতালে বন্দী করে রেখেছিলেন! সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার আলোকে আমি ৩৫ বছর পর একটি বই লিখি, Veronica decides to die।

যে বাড়িতে আপনি বেড়ে উঠেছেন-

কোয়েলহো : সে বাড়িটা এখন আর নেই। কিন্তু, আমার শৈশব স্মৃতি অমলিন থেকে যাবে আমৃত্যু।

ছোটবেলা কী হতে চেয়েছিলেন?

কোয়েলহো : ক্যামেরাম্যান।

লেখালেখির বাইরে করতে ভালোবাসেন এবং দক্ষ এমন কাজ-

কোয়েলহো : তীরন্দাজি। তীর ছোড়াঁর ঠিক আগ-মুহূর্তের উদ্দীপনা আর পর-মুহূর্তের নিস্তব্ধতা বিরাম, আমার মনে হয় এই মহাবিশ্বের মাঝে আমার যে মহাযাত্রা তার ঐকতান করে!

আপনি একেবারেই দক্ষ নন তবু করতে পছন্দ করেন এমন কোনো বিষয়-

কোয়েলহো : গান… একটা গিটার পেলেই আমি গান গাইতে শুরু করি আর আমার বন্ধুরা তা কান বুজে সহ্য করে!

ঘুমের মধ্যে কিসের স্বপ্ন দেখেন?

কোয়েলহো : ব্লগ, টুইটার আর ফেসবুকে কী পোস্ট করবো, এইসব!

আয়নায় তাকালে কী দেখেন?

কোয়েলহো : আমার ঘরের লাইটটা ভালো মতন আলো দিচ্ছে না, ওইটা বদলানো দরকার। (এই ব্যাপারটা গত দুই বছর যাবৎ মনে হচ্ছে!)

প্রিয় পোশাক?

কোয়েলহো : ইয়ুকাটা নামের এক জাপানী পোষাক।

প্রিয় চিত্রকর্ম?

কোয়েলহো : য্যান ভ্যান আইকের ‘আর্নোলফিনি পোর্ট্রেইট’, এইটাই পৃথিবী সবচাইতে দামী পেইন্টিং। লিওনার্দো ভিঞ্চির প্রতি সম্মান দেখিয়েই বলছি, মোনালিসা বিষয়ে আমাদের বড্ড বাড়াবাড়ি!

আর্নোলফিনি পোর্ট্রেইট
‘আর্নোলফিনি পোর্ট্রেইট’, আঁকিয়ে – য্যান ভ্যান আইক

এমন কিছু যা হয়তো ফ্যাশনেবল না, কিন্তু আপনার পছন্দের?

কোয়েলহো : ল্যাংটা হয়ে ঘুমানো!

প্রিয় বাড়ি?

কোয়েলহো : ফ্রান্সের চার্ট্রেস ক্যাথেড্রাল। এর জানলার রঙিন কাঁচের সজ্জা আর মেঝের গোলকধাঁধা জীবনের শুরু থেকে শেষ অব্দি মহাযাত্রার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

আপনার চিন্তাভাবনার জগৎকে ভয়াবহ আলোড়িত করেছে এমন কোনো বই?

কোয়েলহো : ট্রপিক অফ ক্যান্সার। হেনরি মিলারের লেখা। পড়বার সময় মনে হয়েছে বইটির প্রতিটা অক্ষর রক্ত দিয়ে লেখা!

ট্রপিক অফ ক্যানসার বইয়ের প্রচ্ছদ
ট্রপিক অফ ক্যানসার, লেখিয়ে: হেনরি মিলার

প্রিয় সিনেমা?

কোয়েলহো : দুটো সিনেমার নাম বলবো। ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট (১৯৬৮) আর লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া (১৯৬২)।

শেষ কেনা অ্যালবাম?

কোয়েলহো : দ্য বিটলস-এর ‘সার্জেন্ট পেপার’স লোনলি হার্টস ক্লাব ব্যান্ড’। এইটা এতদিন আমার আইপডে ছিলো না।

কোনো ঘটনার জন্য পরবর্তীতে আক্ষেপ করেছেন?

কোয়েলহো : নাহ, কখনো না। আমার যা ইচ্ছে করেছে, আমি সবসময় তাই করেছি – হয়তো বেশির ভাগ সময়ই সেজন্য আমাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।

রূপালি পর্দার প্রেম-

কোয়েলহো : অড্রে হেপবার্ন।

অড্রে হেপবার্ন
অড্রে হেপবার্ন

কাদেরকে শত্রু মনে হয়?

কোয়েলহো : মৌলবাদীদের। আপনি পৃথিবীর প্রত্যেকটি ধর্মেই এদের পাবেন।

শেষ কবে কেঁদেছিলেন?

কোয়েলহো : আমি কিন্তু খুব সহজেই কেঁদে ফেলি। যেমন ধরুন, কোনো সিনেমা দেখে বা পুরোনো কোনো বন্ধুর সাথে ফোনালাপ হলো কিংবা সূর্যাস্ত দেখবার সময়। কান্নাকে আমার কাছে শব্দের মত মনে হয়, কান্না হল খাতায় উঠবার অপেক্ষায় থাকা শব্দগুচ্ছ।

আগামী পাঁচ বছরের প্লান কী?

কোয়েলহো : শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যাওয়া।

ছয়টি শব্দে নিজের সম্পর্কে বলুন-

কোয়েলহো : সৌভাগ্যবান, মুসাফির, তীরন্দাজ, লেখক, ইন্টারনেট আসক্ত!

প্রত্যুত্তর দিন

আপনার ইমেইল প্রকাশিত হবে না। Required fields are marked *