কসমসের সূচনা

১৯৮০ সালে, প্রথমবারের মত, কার্ল সেগানের উপস্থাপনায় প্রচারিত হয়েছিলো কসমসঃ এ পার্সোনাল ভয়েজ। অনেক বছর পর, ডিভিডি রিলিজ দেয়ার সময়, তার স্ত্রী (এবং সিরিজের তিনজন লেখকের একজন) অ্যান ড্রুইয়্যান একটা সূচনা বক্তব্য রেখেছিলেন। এরপর সেগানের কণ্ঠে আমরা শুনি কসমসের পরিচয়, এক যাত্রার আহ্বান। আসুন, সেই সূচনা বক্তব্য এবং কসমসের যাত্রার আহ্বান শুনি।খুব দ্রুতই আমরা এটার সাবটাইটেল রিলিজ দিতে যাচ্ছি। এটা ছোট্টো একটু টীজার……

অ্যান ড্র্যুইয়ানের বক্তব্য

হ্যালো, আমার নাম অ্যান ড্রুইয়্যান।

যখন কার্ল সেগান, স্টিভেন সোটার, এবং আমি, ১৯৭০ এর শেষের দিকে কসমস টিভি সিরিজ লিখেছিলাম, তখন অনেক কিছুই অন্যরকম ছিলো। তখন আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পুরো পৃথিবীকে কব্জা করে রেখেছিলো, কোল্ড ওয়ার এর মাধ্যমে। আমাদের সভ্যতার সম্পদ আর বৈজ্ঞানিক অভিনবত্ব অপচয় হচ্ছিলো অস্ত্রের উত্থানে। ওরা নিয়োগ দিয়েছিলো পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি বিজ্ঞানীদেরকে, আর পৃথিবীকে ঢেকে দিয়েছিলো ৫০,০০০ নিউক্লীয় অস্ত্র দিয়ে।

02. onubadokder adda

অনেক কিছুই ঘটেছে এরপর। কোল্ড ওয়ার এখন ইতিহাস, বিজ্ঞানও এগিয়েছে অনেকদূর। আমরা নভোযান দিয়ে সৌরজগতের পরিক্রমা শেষ করেছি। আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান ব্রহ্মাণ্ডের প্রাথমিক ম্যাপ বানানো হয়েছে। মানুষের জীনের ভেতরের ব্রহ্মাণ্ড-ও আমরা ঘুরে দেখেছি।

যখন কসমস প্রথম প্রচার করা হয়, তখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ছিলোনা। দুনিয়াটা অনেক অন্যরকম ছিলো। কী এক সৃষ্টি কার্ল সেগানের! কত কিছু সহ্য করেছেন তিনি, এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করতে গিয়ে। বিজ্ঞানের ইতিহাসে ২০টি ঘটনাবহুল বছর পার হবার পরেও, কসমস এর খুব একটা সংশোধন এর প্রয়োজন পড়ে না, এবং সত্যি বলতে, এখানে ভবিষ্যদ্বাণীর সংখ্যা কম ছিলোনা। কসমস, একদিকে যেমন, বিজ্ঞানের জয়যাত্রার ইতিহাস; অন্যদিকে একটা প্রচেষ্টাও বটে, যাতে একটা মূল বার্তার আধ্যাত্মিকতা পৌঁছে দেয়া যায়। আর সেটা হলো – এই ব্রহ্মাণ্ডের সাথে আমাদের একাত্মতা।

আসুন, উপভোগ করি “কসমস”; সেই গর্বিত উপাখ্যান, যা ব্যাখ্যা করবে – কীভাবে আমাদের ৪০,০০০ পূর্বপুরুষের অন্বেষণের মাধ্যমে, এই মহাবিশ্ব আর মহাকালের মাঝে আমরা নিজেদের অবস্থান খুঁজে পেয়েছি। আর কীভাবে, বিজ্ঞানের অসাধারণ শক্তি দিয়ে, আমরা মহাজাগতিক বিবর্তনের ধারা পুনর্নির্মাণ করেছি, এবং সেই উপাখ্যানে নিজেদের ভূমিকা সংজ্ঞায়িত করেছি।

কার্ল সেগানের আহ্বান

কসমস হচ্ছে, যা কিছু বর্তমান, যা অতীতে ছিলো, বা ভবিষ্যতে আসবে। কসমস নিয়ে আমাদের ভাবনা, আমাদেরকে অভিভূত করে,যেন শিরশির করে ওঠে মেরুদণ্ড, রোধ হয়ে আসে কণ্ঠ। এক ক্ষীণ অনুভূতি, যেন বিশাল উচ্চতা থেকে লাফ দেয়ার সুদূর অতীতের স্মৃতি। উপলব্ধি আসে, যেন আমরা সর্বোচ্চ রহস্যের ভেতরে ঢুকে পড়ছি। কসমসের আয়তন বা বয়স মামুলি মানুষের জ্ঞানের সীমার বাইরে। এই বিশাল আর অসীম শূন্যতার কোথাও লুকিয়ে আছে আমাদের বসতি, এই পৃথিবী।

প্রথমবারের মত আমাদের হাতে এসেছে, এই পৃথিবীর ও নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। সময়টা খুবই নাজুক। কিন্তু আমাদের প্রজাতি এখনো তরুণ, কৌতুহলী, এবং সাহসী! ব্যাপারটা আশাব্যঞ্জক! গত কয়েক হাজার বছরে, আমরা চোখ ধাঁধানো এবং অপ্রত্যাশিত কিছু আবিষ্কার করেছি – এই কসমস এবং এর মধ্যে আমাদের অবস্থানের ব্যাপারে। আমার বিশ্বাস, আমাদের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ধারিত হবে আমরা কসমসকে কতটুকু বুঝি, তার ওপর… যে কসমসে আমরা ভেসে আছি, সকালের আকাশে ধূলোর একটা কণার মত করে।

02. onubadokder adda

আমরা একটা যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি, এই কসমসের মধ্যে। আমাদের পথে আসবে ছায়াপথ, নক্ষত্র, গ্রহ; প্রাণ ও সচেতনতার আগমন, বিবর্তন, এবং বিলুপ্তি; বরফের গ্রহ, হীরের নক্ষত্র’ নক্ষত্রের মত বিশাল পরমাণু, আর পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র ব্রহ্মাণ্ড! কিন্তু এই গল্পটা আমাদের এই গ্রহ নিয়েও। এবং সেই উদ্ভিদ ও প্রাণীদের নিয়ে, যারা আমাদের সাথে এই গ্রহটাতে ভাগাভাগি করে আছে। আর এই গল্পটা আমাদের। কীভাবে আমরা কসমস সম্পর্কে এতোটুকু জ্ঞান অর্জন করলাম। কীভাবে কসমস আমাদের বিবর্তন ও সংস্কৃতিতে প্রভাব রেখেছে। আর আমাদের নিয়তি কেমন হতে পারে। আমরা সত্যের সন্ধান করতে চাই, সেটা আমাদেরকে যেদিকেই নিয়ে যাক না কেন!

কিন্তু সত্যের সন্ধানে, কল্পনা এবং সংশয়-দুটোরই ডাক পড়বে। আমরা অনুমান করতে পিছপা হবোনা। কিন্তু সতর্ক থাকবো, অনুমান আর বাস্তবকে যাতে মিলিয়ে না ফেলি। এই কসমস ঠাসা, অগণিত চমকপ্রদ বাস্তবতা দিয়ে, অভাবনীয় পারস্পরিক সম্পর্ক দিয়ে, প্রকৃতির অবিশ্বাস্য জটিলতা দিয়ে। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ হচ্ছে, মহাজাগতিক সমুদ্রের সৈকতের মত। এই সৈকতেই, আমরা আমাদের জানা অধিকাংশ তথ্য পেয়েছি। খুব সম্প্রতি, আমরা সামান্য একটু এগিয়েছি…… গোড়ালি পর্যন্ত বলা যায়। আর পানিটা বেশ বন্ধুভাবাপন্ন বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের অস্তিত্বের একটা অংশ ঠিকই জানে, আমাদের সৃষ্টি এখানেই। আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই। এবং, আমরা পারবোও। কারণ, কসমস আমাদের ভেতরেও আছে। আমরা নক্ষত্রের টুকরো দিয়েই তৈরি। আমাদের মধ্যে দিয়েই কসমস নিজেকে খুঁজে পাবে। আমাদের সবার যাত্রার শুরু – এখানেই।

আমরা কসমসে ঘুরে বেড়াবো, এক কাল্পনিক জাহাজে। সাধারণ গতি আর আকৃতির সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে আমরা ছুটে যাবো মহাজাগতিক সুরের টানে। এটা আমাদেরকে নিয়ে যাবে, যে কোনো স্থানে, যে কোনো কালে। তুষারপাতের মত কোমলভাবে, ড্যান্ডেলায়ন বীজের মত সহজাতভাবে, এটা আমাদের নিয়ে যাবে স্বপ্নের দুনিয়ায়, বাস্তবতার দুনিয়ায়। আসুন, আমার সাথে……

উদ্ধৃতিঃ কসমস (১৯৮০), এপিসোড ১

প্রত্যুত্তর দিন

আপনার ইমেইল প্রকাশিত হবে না। Required fields are marked *