মমির সাথে কিছু কথা- এডগার এ্যালান পো (১৮৫০)

গতকাল সন্ধ্যার সেমিনারটাতে থাকা আমার জন্য যারপরনাই কঠিন ছিল। তন্দ্রার সাথে সাথে, প্রচন্ডরকম বিরক্তিকর মাথাব্যথায় চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। তাই, বাইরে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করার চেয়ে রাতে হালকা খেয়ে একটা কড়া ঘুম দেয়াটাই আমার কাছে কেন জানি ভাল মনে হচ্ছিল।
.
রাতের একটা হালকা খাবার হলেই চলে আমার। খাবারের পাতে ওয়েলশ র‍্যাবিট আমার খুব পছন্দ। কিন্তু, এক লহমায় এক পাউন্ড পেটে চালান করে দেয়া আমার জন্য ভাল নয় মোটেও। সত্যি বলছি, আমার দুটো সাবড়ে দিতেও কোন আপত্তি নেই। দুটো থেকে তিনটেতেও কার কি আসে যায়, পার্থক্যতো ঐ একটাতেই ঘুরপাক খায়। তাই আপাত চারটা টা খাওয়ার ধান্দায় আছি। আমার স্ত্রীতো ভাবল আমার মত খাদকের জন্য পাঁচটা নিয়ে আসবে কিনা। কিন্তু সে পাঁচ শুনে একটু ঘাবড়ে গেল বোধহয়, সেটা খুব ভালভাবেই বুঝেছি, সে ভেবেছে, আমি কি আসলেই পাঁচটা খেতে পারব? নাকি ফাজলামো করছি, কিন্তু, বেচারি বুঝলোইনা, আমি পাঁচ দিয়ে “ব্রাউন স্টাউট” মদের কথা বলেছি, ভাতের সাথে আঁচারের যেমন দহরম-মহরম সম্পর্ক, ওয়েলশ র‍্যাবিটের সাথে ব্রাউন স্টাউটের একই সম্পর্ক, এক বোতল না হলে ওসব ওয়েলশ র‍্যাবিট আমার মুখে রোচে না, সে যত মজাদারই হোক।
.
যাই হোক, রাতের খাবার খেয়ে, নাইটক্যাপটা মাথায় পড়ে নিলাম, আগামীকাল পাক্কা দুপুর পর্যন্ত ঘুমাব সেই আশায়, বালিশটা মাথার নিচে গুঁজে দিয়ে দুনিয়ার সব চিন্তা এক করে, সাথে সাথে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।
.
কিন্তু হতভাগাদের কপালে সুখ টেকে কতক্ষণ? একেতো রাস্তার পাশের বেলের শব্দ, আর তার উপর দরজায় বারবার ধাক্কার শব্দে পড়িমড়ি করে উঠে বিছানায় বসলাম। চোখ ঘষতে ঘষতে আশেপাশের অবস্থাটা ঠাহর করার আগেই বউ এসে একটা কাগজ মুখের উপর ছুড়ে মেরে দিয়ে চলে গেল। কাগজটা একটা চিঠি, আমার পুরণো বন্ধু- ডাক্তার পনোনার লিখেছে। চিঠিতে লেখা-
.
“প্রিয় বন্ধু আমার! চিঠি হাতে পাওয়া মাত্র আমার এখানে চলে আসবে চটজলদি। আমাদের তোমার সাহায্য খুবই দরকার। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে মমি পরীক্ষার জন্য সেন্ট্রাল মিউজিয়ামের অনুমতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। মমি মানে যে কি তা আর বলার দরকার নেই, সে তুমি ভালভাবেই জান। মমিকে বেসুরত করে ভেতরটা দেখব, যদি চাই আর কি। আমার কয়েকজন কাছের মানুষ থাকবে সাথে, তুমিতো অবশ্যই। মমিটা বাড়িতেই আছে। আজ রাত ১১ টায় মমির দফা রফা করে ছাড়ব, চলে এসো।”
ইতি, তোমার বন্ধু, পনোনার।
.
মনের সুখে সব ছেড়েছুড়ে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলাম। বিছানা থেকে নেমেই বিদ্যুৎবেগে কঠিন মাঞ্জা মেরে উল্কার গতিতে ছুটলাম ডাক্তারের বাড়িতে। পনোনারের ওখানে যেতে যেতে মনে হল আমার আসলে ঘুমই হয়নি, একেবারে সটান জেগে আছি তখনও। সেখানে পৌছে পনোনারের উৎসুক বন্ধুদের দেখতে পেলাম, তারা শুধু আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল বোধহয়। দেখে মনে হল আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে তারা বেশ বিরক্ত। মমিটা ডাইনিং টেবিলের উপর ছড়িয়ে রাখা। আমি ঘরে ঢোকার সাথে সাথে মমিখানার ব্যবচ্ছেদ শুরু হল।
.
বেশ ক’বছর আগে, নীল নদের এলাকা থিবেস থেকে মোটামুটি দূরত্বে অবস্থিত, লিবিয়ান পর্বতের পাশ ধরে, এলিথিয়াসের সমাধির কাছ থেকে পনোনারের খালাত ভাই ক্যাপ্টেইন আর্থার স্যাব্রেটাশ একজোড়া মমি এনেছিলেন। তারই একটা হল এটা। যদিও, এই সময়ে গ্রোটস এলাকা থিবেন সমাধি এলাকার চেয়ে কম জৌলুসপূর্ণ হলেও, মিশরীয়দের ব্যাক্তিজীবনের প্রায় পুরোটাই দেয়ালচিত্রে ধারণ করার কারণে থিবেনের তুলনায় গ্রোটস এলাকাটা সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। যে চেম্বার থেকে এই মমিখানা নেয়া হয়েছে ঐ চেম্বার নাকি চিত্রকলার জন্য বেশ বিখ্যাত। পুরো চেম্বার জুড়ে দেয়ালচিত্র, তামার খোঁদাই করা ভাস্কর্য, মার্বেল পাথরের মূর্তি, ফুলদানি, অনিন্দ্যসুন্দর মোজাইকের ক্যালিগ্রাফি। এসব দেখে বোঝাই যায় এখানকার মৃত লোকদের অর্থ-সম্পদের কোন কমতি ছিলনা।
.
“ক্যাপ্টেইন স্যাব্রেটাশ সাহেব মমিটা যেভাবে এনেছিলেন মিউজিয়ামে মমিটা ওভাবেই রাখা ছিল আট বছর ধরে। শুধু দর্শনার্থীরদের জন্যই উন্মুক্ত ছিল সেটা। আর এই দুর্লভ বস্তু যে কত কসরত করে আমাদের ঘরে আনা হয়েছে, তা ভাবতে গেলে লোকে আমাদের বাহবা দিয়ে কুল পাবে না।
.
টেবিলের কাছে যেতেই দেখলাম প্রায় ৭ ফিট লম্বা, ৩ ফিট চওড়া ও আড়াই ফুট গভীর একটা বাক্স রাখা আছে। বাক্সটা আয়তকার, কফিনের মত না। বাক্সটাকে দেখে মনে হল বাক্সটা অতি মূল্যবান ম্যাপল কাঠের তৈরি, কিন্তু কেটে দেখা গেল একি! এতো দেখি পুরো মোটা কাগজের আস্তরন। পুরো কাগজ জুড়ে মৃতদের সৎকারের বিভিন্ন ছবি ও হায়ারোগ্লিফিক লেখা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সৌভাগ্যবশত আমাদের সাথে গ্লিডোন সাহেব থাকার কারণে ওসব লেখার মর্মোদ্ধারে তেমন বেগ পেতে হলনা। লেখাগুলো বেশিরভাগই ধ্বনি সম্পর্কিত। সব মিলিয়ে যার একটাই অর্থ “আলকেমিস্ট”।
.
প্রথম বাক্সটা খুলতে হালকা বেগ পেতে হল। খুব সাবধানে খুললাম, যাতে বাক্সের গায়ে কোন আঘাত না লাগে। বেশ কষ্ট করে খোলার পর ভেতরে দেখি নতুন যন্ত্রনা হিসেবে আরেকখানা বাক্স হাজির। ভেতরের বাক্সটা বাইরেরটা থেকে অনেক ছোট। দেখতে কফিনের মত। বাইরের বাক্স ও ভেতরে বাক্সের মাঝখানটা রেজিন দিয়ে ভর্তি, রেজিনের জন্য ভেতরের বাক্সের রং কিছুটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
.
দ্বিতীয়টা খোলার পর দেখলাম, ভেতরে আরেকটা ছোট কফিনের মত বাক্স, দেখতে আগেরটার মতই, তবে মাঝে রেজিনের কোন স্তর নেই। একটা আরেকটার সাথে লাগানো। আগেরটার সাথে পার্থক্য হল এটা সিডার কাঠের তৈরি, এমনকি এখনো সিডার কাঠের সুন্দর গন্ধ বের হচ্ছে।
.
তৃতীয় কেসটা খুলে দেহটা বাইরে বের করার পর ভাবলাম ব্যান্ডেজ আর লিনেনে মোড়ানো সাধারণ কোন মমি দেখব। কিন্তু, তার বদলে পেলাম প্যাপিরাসের একটা আবরন। পুরু প্লাস্টারের প্রলেপ ও তার উপরে বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা। ছবিগুলোতে মৃতের প্রতি পালনীয় কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য ও দেবতাদের প্রতি উৎসর্গ করা বিভিন্ন উপহারসামগ্রী ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। আরো রয়েছে একই আকৃতির বিভিন্ন মূর্তির ছবি। সম্ভবত ওপারে মৃতের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনার জন্যই এসব করা। মৃতের পা থেকে মাথা পর্যন্ত আবারো মৃতের নাম, পদবী; তার আত্মীয়-স্বজনের নাম ও পদবী খোঁদাই করা রয়েছে।
.
মমির গলার দিকে বিভিন্ন রঙের কাঁচের পুঁতির মালা, মালাগুলো তাদের দেবতাদের আকারে সাজানো হয়েছে। বিশেষ করে স্ক্যারাবিউসের মূর্তি। স্ক্যারাবিউস হল গুবড়ে পোকা। কোমড়ের দিকে তার একইভাবে ছোট একটি মালা জড়ানো। প্যাপিরাসের আবরণ তোলার পর দেখলাম দেহটা একেবারে অক্ষত। কোন উৎকট গন্ধও নেই। গায়ের মাংস হালকা লালচে। চামড়া শক্ত, মসৃন ও চকচকে। দাঁত ও চুলগুলো ভাল অবস্থায় ছিল। আঙুলগুলোও চমৎকারভাবে সোনায় মোড়ানো। চোখগুলো তুলে ফেলে সেখানে কাঁচের চোখ বসিয়ে দিয়েছে, কাঁচের চোখ হলেও চোখগুলো বেশ জীবন্ত। জীবন্ত চোখে অমন দৃঢ় চাহনি দেখে অবাক হয়ে গেলাম।
.
গ্লিডন সাহেব বললেন, চামড়ার লাল রংটা মূলত আলকাতরা দিয়ে সংরক্ষণের জন্য হয়েছে। কিন্তু, আবরণের কিছুটা ধারালো ছুড়ি দিয়ে চেঁছে নিয়ে আগুনে ফেলতেই কর্পূর ও অন্যান্য পদার্থের মিষ্টি গন্ধ বের হল।
.
মমিটার নাড়িভুড়ি যেখান দিয়ে বের হয় সে জায়গাটা ভালভাবে খুঁজে দেখলাম, কিন্তু খুঁজেই পেলাম না। উপস্থিত কেউ কল্পনাই করতে পারলনা যে এমন অক্ষত মমি আদৌ পাওয়া সম্ভব। মমির ঘিলুটা সাধারণত নাক দিয়ে বের করা হয়, নাড়ি-ভুড়িগুলো এক পাশ থেকে কেটে বের করে দেহটা ধুয়ে-মুছে সাফ করে লবন মেখে বেশ ক’সপ্তাহের জন্য ফেলে রাখা হত। আর এরপরই শুরু হত আসল মমিকরণের কাজ।
মমির দেহটা সহজের খোলার কোন উপায় না পেয়ে, পনোনার সরাসরি কাটাকুটিতেই যাবে বলে ঠিক করল। ঘড়িতে রাত বাজে তখন দুটো। সেদিনকার মত সবাই সিদ্ধান্ত নিল আজকের মত এই শেষ, আবার কাল সন্ধ্যায় শুরু করা যাবে।
-তবে যাবার আগে কেউ কেউ ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে দু-একবার পরীক্ষা করে দেখতে বলল!
তিন-চার হাজার বছর আগেরকার একটা মমিকে কারেন্টে শক দেয়ার মত উদ্ভট আইডিয়া যদিও আমাদের মত বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ লোকের কাছ থেকে আশা করা যায়না, তবুও কেন জানি মনে হল, কাজতো হতেও পারে। তাই কৌতুহল ও আগ্রহের ক্ষিদে মেটানোর জন্য কোনমতে ডাক্তারের পড়ার ঘর থেকে একটা ব্যাটারি ম্যানেজ করে মমিটাকে সেখানে নিয়ে গেলাম।
অনেক সাধনার পরে মাথার জায়গা থেকে কিছুটা মাংস কেটে নিলাম, এই জায়গাটা শরীরের অন্যান্য জায়গা থেকে নরম ছিল।কিন্তু কারেন্টে শক দিয়ে যা ভাবলাম তাই হল, কোন নড়চড় নেই। এহেন ব্যার্থতা দেখে নিজেরাই নিজেদের বোকামির জন্য হাসাহাসি করতে করতে একে অপরকে বিদায় জানাচ্ছিলাম, এমন সময় আচমকা আমার চোখ মমিটার চোখের পাতায় আটকে গেল, যে চোখকে আমি কাঁচের ভেবেছিলাম, সেই চোখ দৃঢ় চাহনির বদলে প্রায় পুরোটাই চোখের পাতায় ঢাকা। এমনকি চোখের পাতার নিচের শিরা-উপশিরাও হালকা দৃশ্যমান!
ভয়ে-আতংকে হেঁচকি উঠে গেল আমার, হেঁচকির শব্দ শুনেই সবাই বিষয়টা টের পেল।
জিনিসটা দেখে ভয় পেয়েছি তা বলা যাবে না, আসলে ভয় কথাটা আমার বেলায় ঠিক খাটেনা। একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম, সম্ভবত ব্রাউন স্টাউট একটু বেশিই গেলার ফল। বাকিরা সবাই ভয়ে পগার পার হতে বেশি সময় নিলনা- পনোনারের দৌড় দেখেই আমার মায়া লাগল, গ্লিডন মশাইতো ভোজবাজির মত অদৃশ্য হয় গেলেন, আর সিল্ক বাকিং হাম সাহেব সবার উপর দিয়ে টেবিলের নিচে সুড়ুত করে ঢুকে পড়লেন সে কথা বলার মত সাহস বোধহয় ওনার কোনদিন হবেনা।
.
যাই হোক, সবাই প্রথম ধাক্কাটা কাটিয়ে আবারো নতুন উদ্দ্যমে শুরু করলাম কাটাকাটি, বিদায় নেয়ার গুলি মারি। এবার অপারেশন শুরু হল ডান পায়ের বড় আঙুল থেকে, বড় আঙুলটা কেটে ভেতর থেকে নরম মাংসপেশী বের করলাম। দিলাম কারেন্টে শক! কারেন্টে শক দেয়ার সাথে সাথে মমিটা ডান হাঁটুটা জীবন্ত মানুষের মত এমনভাবে ভাঁজ করল যে তা একেবারে তলপেট পর্যন্ত গিয়ে ঠেকল। আর শেষমেষ পনোনারকে হাঁটু ভাঁজ করে এমন এক লাথি মারল, পনোনার তীরের মত ছিটকে জানালা ভেঙে গিয়ে পড়ল নিচের রাস্তায়।
.
সাথে সাথে সবাই নিচে রাস্তায় দৌড়ে গিয়ে ভাবলাম আধমরাটাকে নিয়ে আসি, কিন্তু গিয়ে দেখি সে দৌড়ে সিড়ি ভেঙে উপরে উঠছে, এমন ভাব সে যেন কোন এক গুপ্ত রহস্যের সমাধান করছে, আর নাছোড়বান্দার মত আমরা পরীক্ষাটার পেছনে যে লেগেই আছি সে উদ্যম নিয়ে আবার পনোনার নতুন করে কাজে ঝাপিয়ে পড়ল।
.
এরপর সবাই ডাক্তারের কথামত মুখের উপর একটা গভীর গর্ত করল, গর্ত করার পর, এবার ডাক্তার দিল কারেন্টে শক। নৈতিক, শারীরিক, গোপন আর বাস্তব; যাই বলি না কেন, এবার কাজ হল দারুণ! মমিটা চোখ খুলে বেশ কবার পিটপিট করল, বার্নেস যেমন মাইম করার সময় করে। পরেরবার দিল হাঁচি, হাঁচি দিয়ে উঠে বসে ডাক্তারের মুখে একটা রামঘুষি মেরে দিল। এরপর গ্লিডন ও বাকিং হামের দিকে তাকিয়ে চোস্ত মিশরীয় ভাষায় বলা শুরু করল-
.
“আমি আপনাদের বোকার মত কাজ দেখে খুবই বিরক্ত, অবশ্য ডাক্তার পনোনারের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করিনা, সে বেচারা এসবের কিছুই জানেনা, তাকে মাফ করা যায়। কিন্তু গ্লিডন আর সিল্ক সাহেব, আপনারা মিশরে গিয়েছেন, থেকেছেন, সেখানকার আলো বাতাসে বড় হয়েছেন, আমাদের আচার ব্যবহার রপ্ত করেছেন। একেবারেই নিজের মাতৃভাষার মতই মিশরী ভাষা লিখতে ও পড়তে পারেন, আপনাদের সবসময় নিজের কাছের বন্ধু হিসেবে ভেবেছি, তাই আমি আপনাদের কাছ থেকে কি আরো ভাল ব্যবহার আশা করা যায়না? এভাবে আমার দিকে এমন অসভ্যের মত তাকিয়ে থাকা দেখে আমি কি ভাবব? আমার কি ভাবা উচিত? হু! এমন এক ঠান্ডা আবহাওয়ায় কোথাকার কাদের নিয়ে এসেছেন আমার কাপড় ধরে টানাটানি করার জন্য! এই ছোট মিচকে শয়তান ডাক্তারকে যে আমার নাক ধরে অকারণে টানাটানি করতে দিচ্ছেন, কিইবা বলার আছে আপনাদের? এসব নিয়ে। যত্তসব!
.
বলার অপেক্ষা রাখে না এসব শোনা মাত্রই আমাদের হয় কেউ দরজার দিকে চম্পট দিব, হয় হিস্টিরিয়া রোগীর মত আচরণ করব, অথবা ভয়ে মূর্ছা যাওয়াটাও ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার, আমি ধরেই নিয়েছিলাম এসব ছাড়া আর কিছু করার নেই। আর কেউ যদি তিনটে একসাথেই করত, তাও কিছু বলার ছিলনা। কিন্তু আমি যে কিছুই করলাম না, কেন করলাম না, ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। হয়ত বয়সের দোষ, গায়ের রক্ত গরম- এই বয়সে সবাই সব কিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করতে চায়, হয়ত আমার গায়েও তার বাতাস লেগেছে। অথবা হয়ত, মমির এমন সাধারণ আচরণের জন্য ভয় পাইনি। আশেপাশের পরিবেশের জন্য হয়ত মমিকে অতটা পাত্তা দিইনি। যাই হোক, এটা পানির মত পরিষ্কার যে দলের কেউই তেমন ভয় পায়নি। আর সবাই এমন ভাব করল যে আহামরি কোন কিছুই হয়নি।
.
আমি মমি থেকে কিছুটা নিরাপদ দূরত্বে চলে আসলাম, আবার যে একটা ঘুষি মারবে না, তার নিশ্চয়তা কি? ডাক্তার প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে, রাগে লাল হয়ে মমির দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকল। গ্লিডন সাহেব গোঁফে তা দিয়ে শার্টের কলারটা ঠিক করে নিলেন। সিল্ক সাহেব মাথা নিচু করে ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলটা মুখে পুড়ে বসে রইলেন।
.
মমিটা সিল্ক সাহেবের দিকে মুখ ভেংচি দিয়ে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ, এরপর টিটকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করল-
“কি হল কথা বলছেন না কেন? আমার কথা কি কানে যায়না? আর আঙ্গুলটা মুখ থেকে বের করুন! এ কাদের পাল্লায় এলামরে বাবা!”
কথাটা সিল্ক সাহেবের গায়ে লাগল বোধহয়, সে ডান হাতটা মুখ থেকে বের করে, মমিকে টিটকারি মেরে উল্টো আবার বাম হাতটা মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিল!
.
সিল্ক সাহেবের কাছ থেকে কোন সদুত্তর না পেয়ে মমিটা গ্লিডন সাহেবের দিকে তাকিয়ে আমাদের এসব কান্ডকারখানার মানে জানতে চাইল। গ্লিডন সাহেব বেশ লম্বা সময় নিয়ে চোস্ত মিশরীয়তে মমির কথার উত্তর দিলেন, কিন্তু আম্রিকানদের ছাপাখানায়তো হায়ারোগ্লিফিক ছাপানো যায়না, তা না হলে তাদের কথাবার্তা রেকর্ড করে রাখতাম, মন্দ হতনা নিশচয়ই।
.
তবে ঘটনার সারমর্ম হিসেবে বলা যায়, মমি সাথে পরবর্তী সকল কথাবার্তা ছিল প্রাচীন মিশরীয় ভাষায়। দোভাষী হিসেবে ছিল গ্লিডন ও সিল্ক সাহেব। মমির মাতৃভাষায় তাদের দখল ও বাকপটুতা ছিল দুর্দান্ত। শব্দকে চিত্রে মাধম্যে তুলে ধরার ব্যপারটা ভালই লাগল। কিন্তু এই পদ্ধতি আর কতক্ষণ, মমি বেচারা এই জিনিসেই একেবারেই নতুন। কথ্য ভাষায় তাদের কান্ডকারখানার মানে হায়ারোগ্লিফিকে ব্যাখ্যা করতে করতে দোভাষী দুজন ক্লান্ত হয় গেলেন। যেমন কথাবার্তার এক পর্যায়ে গ্লিডোন সাহেবের মমিকে “পলিটিক্স(রাজনীতি) জিনিসটা বোঝাতে পায়ের ঘাম মাথায় তুলতে হল। সামান্য “পলিটিক্স” শব্দটা বুঝাতে তিনি দেয়ালে নাক বোঁচা এক লোক আঁকলেন, যে একটা ডায়াসের উপর দাঁড়ানো, কনুইর কাছে ছেড়া কোট, বাম পায়ে ভর দিয়ে, ডান হাত সামনে রেখে শপথ নেয়ার মত ভঙ্গি করে আকাশের দিকে মুখ হাঁ করে তাকিয়ে আছে। একইভাবে সিল্ক সাহেব উইগ(পরচুলা) বুঝাতেও যারপরনাই গলদঘর্ম হলেন, শেষমেষ পনোনারের কথায় অনুরোধে ঢেঁকি গিলে নিজের উইগটাই খুলে দেখালেন মমিকে।
.
মমিটার নাম আলকেমিস্টো। মূলত, গ্লিডন সাহেব আলকেমিস্টোকে বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য মমি কাটাকুটির পক্ষে বেশ জোড়ালো যুক্তি দেখালেন, আর তার পাশাপাশি কাটাকুটি করে তাঁর ইজ্জতের সর্বনাশ করার জন্য ক্ষমাও চাইলেন। সব শেষ করে আলকেমিস্টোকে বলা হল, আসল কাহিনী যেহেতু বুঝতেই পেরেছে, অতএব টেবিলে বাকি কাজটুকুও শেষ করা যাক। বলার সাথে সাথে ডাক্তার ছুড়ি নিয়ে তৈরি হয়ে হলেন।
.
কথার শেষ পর্যায়ে মনে হল আলকেমিস্টোর মনে কোন সন্দেহ লেগে আছে। কিন্তু, ক্ষমার চাওয়ার কথায় মনে হয় চিড়ে ভিজেছে, তাই টেবিল থেকে নেমেই সে সবার সাথে করমর্দন করল।
.
করমর্দন পর্ব শেষ হবার সাথে সাথে সবাই আলকেমিস্টোর আপাদমস্তক আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ শুরু করে দিল। কপালের গর্ত সেলাই করে, পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে, নাকে প্লাস্টার লাগিয়ে কোনমতে এসপার-ওসপার করলাম।
.
কাটাছেড়ার পর কাউন্টকে, কাউন্ট আলকেমিস্টোর পদবী, মনে হল শীতে কিছুটা কাঁপছে। ডাক্তার আলমারি থেকে কাউন্টের জন্য- জেনিংসের তৈরি অসাধারণ একটি কালো কোট, আকাশী রঙের কম্বলের কাপড়ের স্ট্র্যাপওয়ালা প্যান্ট, একটা গোলাপী ডোরাকাটা সেমিজ, ঢিলা জরিওয়ালা পোশাক, সাদা মোটা ওভারকোট, হুকওয়ালা বেঁতের লাঠি, কানাবিহীন একটা হ্যাট, চামড়ার বুট, খয়েড়ি রঙের বাচ্চাদের হাতমোজা, চোখের চশমা, এক জোড়া হুইস্কার, সবশেষে ঢেউতোলা একটা মাফলার। কাউন্ট ও ডাক্তারের সাইজের বেশকম হবার কারণে পোশাকগুলো ঠিক করতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু সব গায়ে দেয়ার পর কাউন্টকে মোটামুটি ভালই লাগছিল। ডাক্তার এরপর কাউন্টের দিকে হাত বাড়িয়ে আগুনের পাশে একটা চেয়ারের বসতে বলল। বসার পর ডাক্তার ঘন্টা বাজিয়ে সিগার ও ওয়াইনের অর্ডার দিল।
.
বসতে না বসতেই আড্ডা জমে হয়ে উঠল। বেশিরভাগেরই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কাউন্টের জীবিত থাকার ব্যপারটা।
সিল্ক সাহেব কাউন্টকে দেখে বললেন, “আমার অনেক আগেই ভাবা উচিৎ ছিল যে আপনি মারা গিয়েছেন”
বেশ অবাক হয়ে গেল কাউন্ট- “কেন? আমার বয়সতো বেশি হলে সাতশ বছর, বাবা বেঁচেছিলেন প্রায় হাজার বছর, আর মারা যাবার সময় তিনি মোটেই দুর্বল ছিলেন না”
এরপরেই সমার মাঝে শুরু হয়ে গেল মমির বয়স নিয়ে গবেষণা, সবার একটাই কথা, মমির বয়সে নির্ঘাত বড় কোন ভুল আছে, খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেল এলিথিয়াসের সমাধিতে রাখা থেকে শুরু করে আজ অবধি হিসেব করলে মমির বয়স হবে পাঁচ হাজার পঞ্চাশ বছরের মত।
.
সিল্ক সাহেব মমির সাথে কথা চালিয়েই গেলেন, “দেখুন কাউন্ট, আমি স্বীকার করি আপনি এখনো অনেক ইয়াং, কিন্তু আমার কথায় আপনার সমাধিতে থাকার কথা কিছু বলা নেই, আমি আসলে জানতে চাচ্ছি, আপনি কত সময় ধরে আলকাতরায় ডুবে ছিলেন?
“কি! কিসে ডুবে ছিলাম?”
“আলকাতরায়,” সিল্ক সাহেব বুঝিয়ে দিলেন।
“ও আচ্ছা, এখন বুঝলাম, এর উত্তর আছে অবশ্য, কিন্তু আমাদের সময় আমরা মার্কারির বাইক্লোরাইড ছাড়া আর কিছু ব্যবহার করতাম না,”
পনোনার মাঝখানে বললেন, দেখুন কাউন্ট আমরা একটা জিনিস বুঝলাম না প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে সমাধিস্থ হবার পরেও আপনাকে এত কম বয়স্ক লাগছে কেন?
.
“ আরে ভাই! আমি যদি মরে গিয়েই থাকি, তাহলে আমি এখনো মৃতই থাকার কথা, আপনাদের মতে; আমি বুঝেছি যে জিনিস আগে আমাদের কাছে হাতের খেলনা ছিল মানে ক্যালভানিজম, ওদ্দূর যাওয়া আপনাদের সাধ্যে কুলোয়নি জানি, এখনো বাচ্চাই আছেন। ক্যালভানিজমের দিল্লি আপনাদের জন্য আজও বহুদূর। আসল কাহিনী হল, হল আমি আসলে প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলাম, নড়াচড়া করতে পারতাম না, আমার আত্মীয়-স্বজন আমার অবস্থা দেখে ধরেই নিয়েছিল, আমি হয় পটল তুলেছি নাহয় শীঘ্রই তুলব, তাই তারা আমাকে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়, আর আশা করি সংরক্ষণের প্রাথমিক ধারণা আপনাদের আছে,” কাউন্ট টিটকারি দিল সবাইকে।
“না, নেই”
“না থাকাটাই যে স্বাভাবিক, আপনাদের বিদ্যার দৌড়তো একেবারে শোচনীয় পর্যায়ে, যাই হোক আমি এখন বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না, তবে সংরক্ষণের কাজ নিয়ে যদি বলতে চাই তাহলে বলা যায় এতে দেহের সব রকমের জৈবিক কাজ বন্ধ করে দেয়া হত। জৈবিক বলতে সবকিছু, মানসিক থেকে শুরু করে দৈহিক সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়। আবারো বলছি, আমাদের সংরক্ষণের মূল ব্যপারটা ছিল প্রাণী যে অবস্থায় আছে ওই অবস্থাতেই তাকে থামিয়ে দেয়া। কিন্তু আমার সৌভাগ্য হল আমার শরীরে বইছে স্ক্যারাবিউসে রক্ত, তাই আমাকে সংরক্ষণ করা হয়েছিল জীবিত অবস্থায়, আমাকে যেমনটি দেখছেন এখন।
.
“স্ক্যারাবিউসের রক্ত!!” পনোনারের চোখ বড় হয়ে গেল।
“হ্যাঁ, স্ক্যারাবিউস হল একধরণের প্রতীক, যা খুবই অভিজাত পরিবারের লোকদের কাছে থাকত। স্ক্যারাবিউসের ধারক মানে এমন এক পরিবারের অংশ হওয়া যাদের প্রতীক স্ক্যারাবিউস, রূপকভাবে বললাম আর কি।”
“কিন্তু এর সাথে এত বছর জীবিত থাকার রহস্য কি”
“কেন? সাধারণত মিশরে মমি করা হয় ভেতরের সব ফেলে দিয়ে, একমাত্র স্ক্যারাবিউস পরিবার এই রীতির বিরোধিতা করত, তারা যে যেভাবে আছে সেভাবেই মমি হতে চাইত, তার মানে কি আমি স্ক্যারাবিউসের কেউ না? যেহেতু আমার আগাগোড়া সবই আছে, তাহলে আমিও স্ক্যারাবিউসের সদস্য, আর এসব ছাড়া বেঁচে থাকাওতো সম্ভব না, তাইনা?”
“বুঝেছি, তার মানে হাতে যা মমি এসেছে তার সবই স্ক্যারাবিউ পরিবারের সদস্য,” সিল্ক সাহেব গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে বললেন।
“কোন সন্দেহ নেই”
“আমি ভেবেছিলাম স্ক্যারাবিউস মিশরীয়দের কোন দেবতা,” গ্লিডোন সাহেব বেশ শান্তস্বরে বললেন।
“মিশরীয়দের কি?” মমি চিৎকার করে বলল।
“দেবতা”
“গ্লিডন সাহেব! আমি আপনার কথা শুনে বেশ অবাক হচ্ছি, এই ধরণীতে কোন জাতি কখনো একজনের বেশি ঈশ্বরকে স্বীকৃতি দেয়নি, স্ক্যারাবিউস, ইবিস, এরা হল প্রতীক বা মাধ্যম, যাদের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আমরা ঈশ্বরের কাছে পৌছানোর চেষ্টা করি, ঈশ্বরের কাছেতো আর এমনি এমনি পৌছানো যায়না, তিনিতো আর ছেলের হাতের মোয়া না, যে চাইলেই পেয়ে যাবেন।”
কথাটি শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।
-পনোনার কিছুক্ষণ পর আবার নীরবতা ভাঙলেন।
“তার মানে আপনার কথা শুনে বোঝাই যায়, নীল নদের তীরে স্ক্যারাবিউস পরিবারের অনেক জীবন্ত মমি আছে।”
আলবৎ আছে! এখনো আছে, দুর্ঘটনাবশত স্ক্যারাবিউদের সংরক্ষণ করা হয়েছিল, কিছু কিছু উদ্দেশ্যমূলকও ছিল, তাদের সবাইই সমাধিতে এখনো জীবিত আছে”
“ইয়ে মানে! উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল? একটু বুঝিয়ে বললে ভাল হয়,”
.
এই প্রথম আমি মমিকে প্রশ্ন করার কারণে মমি চশমার ফাঁক দিয়ে আমাকে বেশ কিছুক্ষণ মেপে নিয়ে খুব আনন্দচিত্তে বলা আরম্ভ করল-
“আমাদের সময় লোকে প্রায় আটশ বছর বাঁচত, কেউ আবার দুর্ঘটনাবশত ছয়শ বছরেই মারা যেত, কেউ এর চেয়েও বেশি বাঁচত, কিন্তু আটশ বছর বেঁচে থাকা ছিল একদম সাধারণ। যখন মমিকরণের পদ্ধতি আবিষ্কার হল, তখন দার্শনিকরা ভাবল, আরে! মমি করেতো আমাদের জীবনটাকে কিস্তিতে ভাগ করা যায়, এক ঢিলে দুই পাখি অনায়াসে মারা হল, কৌতুহলও মিটল আবার বিজ্ঞানেরও উন্নতি হল। অন্তত ইতিহাসের জন্য এমন কাজ করা অপরিহার্য। ধরুন এক ইতিহাসবেত্তা কোন কিছুর সমৃদ্ধ ইতিহাস লিখে পাঁচশ বছরে নিজ ইচ্ছায় মমি হলেন। আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পরে তাঁকে তোলা হবে। ধরুন আবারো পাঁচ-ছয়শ বছর পরে তাঁকে আবার তোলা এসে তিনি নিশ্চিতভাবেই দেখবেন তার সেই বইকে জগাখিঁচুড়ি বানিয়ে রাখা হয়েছে। বইটাকে কেন্দ্র করে উল্টোপাল্টা মন্তব্য, নিজস্ব উদ্ভট অনুমান, হাবিজাবি করে এক হ-য-ব-র-র-ল করে রাখা হয়েছে। বইটার নামে টীকা, ভাষ্য ও সংশোধন করে বইয়ের এমন অবস্থা হবে যে লেখক নিজেই হারিকেন নিয়ে নিজের আসল বই খুঁজতে বের হবেন। আর যখন পাওয়া যাবে তখন মনে হবে এই ছাইপাঁশ খোঁজাটাই পন্ডশ্রম হয়েছে। এরপর লেখক নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যা তিনি অর্জন করেছেন, তা দিয়ে আবার বইটাকে আসল রূপে নিয়ে আসবেন। আর এভাবেই আমাদের মনীষিরা বিভিন্ন ভাবে তাদের লিখিত বইগুলো সংশোধনের ফলে আমাদের ইতিহাসকে রূপকথা হবার হাত থেকে বাঁচান।
.
“আমি কি আপনার কাছে একটি প্রশ্ন করতে পারি স্যার? স্যার! একটু সময় দিবেন, দয়া করে!” পনোনার বেশ কাতর স্বরে বলল।
“হ্যাঁ! কেন নয়? অবশ্যই!”
“স্যার! আপনি বললেন যে ইতিহাসবেত্তারা পুনরায় জীবত হয়ে আবার তাদের ইতিহাস সংরক্ষণ করেছেন, তাহলে কাব্বালার কতটুকু সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে?
“হুম, কাব্বালার কথা ঠিকই ধরেছেন, তখনকার ঘটনা আর অলিখিত ইতিহাস দুটোই সমান তালে চলেছে, তাই দুটোর মধ্যে কোনটাকেই ভুল বলা যায়না।
“তার মানে এটা মোটামুটি বলাই যায় যে, আপনাকে সমাধিস্থ করার পর থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পেরিয়ে গেছে, ধরে নিলাম, আপনার সময়ের রীতিনীতিগুলো যদি স্পষ্ট নাও থাকে, তবুও একটা জিনিস নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে বুঝতে পারছি, আশা করি, আপনিও সেটা ভালভাবে জানেন, সেটা হল, “সৃষ্টি” তাও বেশি না মাত্র হাজার বছর আগেকার কথা।
“স্যার!!” কাউন্ট বলল।
কাউন্ট সৃষ্টি কি বুঝেনি, এরপরে আরো বেশ কতক্ষণ ধরে ব্যাটাকে বুঝানোর পরে, ব্যাটা বুঝল ডাক্তারের কথা।
এরপরে আবার শুরু করল।
“আপনি যা বলছেন তা আমার জন্য একেবারেই নতুন। আমার সময়ে আমি এমন কাউকে পাইনি যে কল্পনায়ও ভাবত যে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের একটা শুরু আছে। তবে একজনের কথা মনে করতে পারি, একবারই শুনেছিলাম তাঁর নাম, যাকে দিয়ে এই পৃথিবীর সবকিছুর সৃষ্টি হয়েছিল, নাম “আদম” বোধহয়। তার মাধ্যমেই এটা শুরু হয়েছিল। যদ্দূর জানি মাটি থেকেই এদের সবার উৎপত্তি। আমি পাঁচটা মানুষের দলের নাম বলতে পারব, যারা এই পৃথিবীর পাঁচ জায়গায় একসাথে বেড়ে উঠছে।
এই সময়ে সবাই হাঁফ ছেড়ে বাচল বোধহয়। কেউ কেউ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। সিল্ক সাহেব কাউন্টের পিছনের দিকে একবার, আবার সামনের দিকে একবার তাকিয়ে বললেন-
“আপনার সময়ে এরকম জীবনকে ভাগ ভাগ করে বেঁচে থাকার মূল উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞানকে সংগ্রহ ও সমৃদ্ধ করা। আমরা প্রায় সময়ে মিশরীয়দের জ্ঞানে-গুনে অনেক নিচে ভেবে এসেছি। কিন্তু এখন যদি আম্রিকানদের জ্ঞানকে আপনাদের জ্ঞানের সাথে তুলনা করা হয়, সেখানের আপনাদের অবস্থান তলানিতে গিয়ে ঠেকবে নিশ্চিত। এর মূলে রয়েছে মিশরীয়দের বোকামি, নিরেট বোকামি।”
“বুঝলাম না, আসলে আপনি কি বলতে চাইছেন, কোন কোন বৈজ্ঞানিক বিষয়ে আমরা পিছিয়ে আছি? একটু যদি বলতেন,” কাউন্ট খুব বিনয়ের সাথে বলল।
উপস্থিত সবার মধ্যে তখন মানুষের মস্তিষ্কবিদ্যা ও প্রানী-চুম্বকতত্ত্বের ওপর সফলতা বলার হিড়িক পড়ে গেল। মানে যে যেভাবে পারে, যে যা জানে তা নিয়েই কাউন্টের সামনে ঝাপিয়ে পড়ল।
.
এসব শুনে কাউন্ট বলল, মস্তিষ্কবিদ্যা নিয়ে তাদেরও অগ্রগতি কম হয়নি, কিন্তু সময়ের আবর্তে তা হারিয়ে গেছে, কিন্তু মেসমারের কাজগুলো থেবানের কবরে ঢুকিয়ে দেয়াটা ছিল চরম অন্যায়, যে থেবান উকুন সহ আরো সেরা কিছু তৈরি করেছিলেন। যদিও তাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল।
আমি তখন কাউন্টকে জিজ্ঞেস করলাম যে তাদের লোকেরা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহনের ব্যপারটা কীরকম দেখত, কাউন্ট একটু হাসি দিয়ে বলল, তারা খুব ভালভাবেই এসব নিয়ে কাজ করত।
.
এটা শুনে একটু ধরা খেয়ে গেলাম, এরপর আমি পাল্টা আরো প্রশ্ন করলাম জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে, আমার পাশে একজন, যে এতক্ষণ মুখ খুলেনি, কানে ফিসফিস করে বলল, প্লুটোমির কথা বলতে, আমি ভাবলাম, সে আবার কে? হোক সে ছাতার মাথা, সাথে আরো কিছু কঠিন কঠিন শব্দ বলতে লাগলাম কাউন্ট ব্যাটাকে বাগে আনার জন্য।
.
এরপর আমি কাঁচ বানানো নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, বিশেষ করে আতসী কাঁস ও লেন্সের ব্যপারে। ব্যাটাকে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে থাকলাম, আমার পাশের জন কনুই দিয়ে ধাক্কা দিতে তবেই থামলাম। পাশের জন্য বলল, “দোঁহাই লাগে ভাই আপনার, এসব বাদ দিয়ে শালাকে Diodorus Siculus নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেন, দেখি ব্যাটার দৌড় কত?” কাউন্ট উল্টো আমাকে প্রশ্ন করল যে আমাদের কি এমন কোন লেন্স আছে, যা দিয়ে একেবারে ক্ষুদ্রাকৃতির মূর্তি বানানো সম্ভব।
.
প্রশ্ন শুনে তব্দা খেয়ে গেলাম, কিভাবে এর উত্তর দিব তা ভাবতে ভাবতেই পনোনার বেশ মোক্ষম উপায়ে কাউন্টকে বশে আনলেন।
-“মশাই! আমাদের স্থাপত্যকলার দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন না,” এতক্ষণ ধরে অকারণে খোঁচানোর জন্য পনোনার বেশ রাগ নিয়েই বলল কাউন্টকে।
“নিউইয়র্কে আমাদের বোলিং-গ্রীন ঝরনা দেখুন, তাও যদি না বুঝেন, তাহলে ওয়াশিংটনে ডিসিতে জুপিটারের মন্দির দেখুন, ডাক্তার আরেকটু গভীরে চলে গেল, বলল, মন্দিরের বারান্দাটাতেই রয়েছে বিশটার টার বেশি থাম, একেকটার চার মিটার বেড়, একটার থেকে আরেকটা দশ মিটার দূরে!
.
কাউন্ট মনে হল একটু দমে গেছে এসব শুনে।
ঠিক ওই সময়েই তার আজনাকের একটা স্থাপনার কথা তার মনে পড়ল, যা রাতারাতি বানানো হয়েছিল, কিন্তু তার ধ্বংসাবশেষ এখনো কাউন্টের কবরের উপরে ঘুরপাঁক খাচ্ছে। যেটা থিবেস সমাধির পশ্চিম দিকে কারনাক নামক এক অজপাড়াগাঁয়ে অবস্থিত। কাউন্ট ব্যাটা পনোনারের সেই জুপিটার মন্দিরের বারান্দার সাথে তুলনা করতে লাগল। বারান্দায় নাকি ছিল একশ চুয়াল্লিশটা থাম, সাতত্রিশ ফিট বেড়, আর একটা থেকে আরেকটা দূরত্ব প্রায় পঁচিশ ফিট। স্থপনাটি নীল নদ থেকে দুই মাইল দূরে, এই পুরো দুই মাইল ছিল একটা রাজপথ। রাজপথের পাশে ছিল বিশাল আকারের স্ফিংসের মূর্তি, ওবেলিস্কের স্তম্ভ, একেকটার উচ্চতা নাকি বিশ, ষাট ও একশ ফিট । প্রাসাদটা একমুখী, দুই মাইল লম্বা, আর সাত ভাগে ভাগ করা। পুরো প্রাসাদের ভেতরে বাইরে ছিল হায়ারোগ্লিফিকের হাজারো চিত্র, সে বলল, ঐ একটা দেয়াল দিয়ে তোমার মন্দিরের মত পঞ্চাশ-ষাটটা বানানো যাবে কিনা নিশ্চিত না, কিন্তু দু-তিনশ মন্দির অনায়াসে ঐ দেয়ালে ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। এরপরেও আমাদের মতে মন্দিরের সামনে কারনাকের প্রাসাদ তেমন কিছুই নয়, এরপর একরকম জোর করেই তাকে মানতে বাধ্য করা হল মন্দিরের মত এমন স্থাপনা মিশরে কেউ কস্মিনকালেও দেখেনি।
.
“তা আমাদের রেল ব্যবস্থাপনা নিয়ে আপনার কি মত?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“হুহ! এ আর এমন কি? দেখতেইতো বিতিকিচ্ছিরি! কোনমতে জবড়জং করে কয়েকটা লোহা বসিয়ে দিলেই হল নাকি? আমাদের লোহার খাঁজকাটা বিশাল, লম্বা সেই বেদীগুলো যার উপরে পুরো একটা মন্দির সহ বিশাল পঞ্চাশ ফিট লম্বা ওবেলিস্ক বসিয়ে দেয়া যেত, তার সামনে এসব রেলরোডতো কোন ছার!
.
দমে না গিয়ে, এবার আমি আমাদের আবিষ্কৃত ভারী ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে বলা শুরু করলাম-
কাউন্ট বলল, “সে তোমরাই ভাল জানো।” আবার সাথে এও জিজ্ঞেস করল “আচ্ছা তোমাদের ঐসব ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে কি কারনাকের প্রাসাদটা তোলা যাবে?”
ব্যাটা মনে হল হার মেনে নিচ্ছে, আমি দমে যাবার পাত্র নই, আবার জিজ্ঞেস করলাম “আরতেসিয়ানের কূপ” কি বুঝেন?” কাউন্ট কিছুই না বলে শুধু চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাল। এই সময় গ্লিডন সাহেব আমার দিকে চোখ মারলেন”
“বুঝলেন কাউন্ট সাহেব? সে আপনি কি করে জানবেন? সেতো কিছুদিন আগে মাত্র আবিষ্কার হল, বিজ্ঞানীরা বড় বড় মরুভূমিতে পানি দেয়ার জন্য সেটা ব্যবহার করে থাকেন”
আমি এবার ইস্পাতের কথা বললাম, কাউন্ট নাক উচু করে বলল, “এ আর এমন কি? ইস্পাত দিয়ে ওবেলিস্কের কারুকাজতো আর করতে পারবেনা তোমরা, ওবেলিস্কের নকশা পুরো পেটা তামা দিয়ে করেছি আমরা, হু!”
পুর দলটাই থম মেরে গেল শুনে! এবার ভাবলাম শালাকে দর্শনশাস্ত্রের কিছু কথা বলে আটকাই! সাথে সাথে লাইব্রেরি থেকে “ডায়াল” নামক একটা বই এনে দু-এক অধ্যায় পড়ে ফেললাম, যার সারকথা ছিল “উন্নতির জন্য মহা আন্দোলন” যদিও সেসবের আগামাথা কিছু বুঝিনি, সব মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে, কিন্তু শালাকে আটকানোর এটাই জন্য যথেষ্ট।
.
কাউন্টকে কয়েকলাইন শুরু করার আগেই বলল, “ওসব পড়ে-টড়ে অনেক আগেই ফেলে এসেছি মশাই! পড়ে আন্দোলনটা হয়েছিল, কিন্তু শেষমেষ উন্নতিটা আর আলোর মুখ দেখেনি, সে যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে”
এবার শুরু হল গনতন্ত্রের বুলি কপচানো, আমরা বললা্‌ আমরা এমন এক সমাজব্যবস্থায়, এমন এক দেশে বাস করি যেখানে জনগনই সব, সেই সবকিছুর হর্তাকর্তা, কোন রাজার কোন চোখ রাঙানি নেই।
আমাদের শেষ হবার পর এবার কাউন্টের শুরু হল, “আমার কথা শুনুন এখন, আমাদের সময়ও তেরটি দেশ এক হয়ে পুরো মানবজাতির সামনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, আমরা আমাদের সেরা জ্ঞানী ব্যাক্তিদের দিয়ে পৃথিবীর সেরা সংবিধান তৈরি করেছিলাম। তারা মোটামুটি সব ভালমত চালাচ্ছিল; কিন্তু তাদের হামবড়া ভাবটা ছিল খুব বেশি। পরে ঐ তেরটি দেশের সাথে আরো বেশ কয়েকটি দেশ যোগ হয়ে বিশটার মত দেশ হল, এক হয়ে তাদের নেতা এমন জঘন্য ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলল, যা পৃথিবীর ইতিহাসে আর বিরল”
“তা ওই বদমাশ শাসকের নামটা কি ছিল শুনি”
“মব”
-কি বলব কিছু বুঝতে না পেরে, তাদের দুর্দশা নিয়ে হা-হুতাশ করলাম কিছুক্ষণ।
.
কাউন্ট আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল, কিন্তু মুখে রা নেই। আর এদিকে পাশের সেই চুপচাপ থাকা লোকটি আমার বুকে কনুই দিয়ে বিশাল এক খোঁচা মেরে আবারও ফিসফিস করে বলল, “ তুমি এত বোকা কেন ভাই? যার হাত ধরে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করা হল, আমাদের জাতীয় বীর Solomon De Caus এর কথা বললে না কেন?”
.
আমরা ক্রমাগতই কেন জানি নাস্তানাবুদ হচ্ছিলাম মমির সামনে, এই সময় ত্রানকর্তা হিসেবে হাজির হলেন ডাক্তার। তিনি বললেন, “আপনারা সব জিনিস নিয়েইতো আমাদের সাথে লাগতে এলেন, যাই হোক, পোশাক-আশাক নিয়েও কী কিছু বলার আছে?”
কাউন্ট এবার একেবারে চুপ হয়ে গেল, নিজের প্যান্টের দিকে একবার তাকিয়ে, কোটের ফিতার প্রান্ত হাতে ধরে, কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে ফিতাটা ছেড়ে দিল। আর একেবারে একান-ওকান পর্যন্ত বিশাল একটা হাসি দিল।
তবে আমার মনে নেই কাউন্ট এরপরে আর কিছু বলেছিল কিনা।
.
পনোনারের কথার পরে, গায়ে জোশ ফিরে পাচ্ছিলাম, পনোনার মমির খুব কাছে এসে বেশ গভীরভাবেই জিজ্ঞেস করল, “সম্মানিত সুধী! মিশরীয়রা কি কখনো পনোনারের লজেন্স বা ব্র্যাডেন্থের বড়ি বানিয়েছে কি?”
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে মমির উত্তরের জন্য হা করে বসে রইলাম, কিন্তু কাউন্ট চুপ। লজ্জায় বেচারা লাল হয়ে গিয়েছে, একেবারে মাথা নিচু করে বসে আছে।
– আমার কেন জানি মন হল পৃথিবীর কোন বিজয় এত সুন্দরভাবে শেষ হয়নি, আবার কেন জানি কোন হার দেখেও আমার আজকের মত কষ্ট লাগেনি, জানিনা কেন? কোন এক অদ্ভুত কারণে, মমি বেচারার হারটা মোটেও সহ্য হচ্ছিলনা, আমার জেতার আনন্দ ম্লান হয়ে হয়ে গেল মমির অধোবদনের সামনে। শেষ পর্যন্ত, হ্যাটটা খুলে, মাথা নিচু করে, তাকে সালাম দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে যাই। বাড়ি পৌঁছে দেখি চারটা বেজে গেছে, সাথে সাথে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
-আর এখন বাজে সকাল দশটা, সেই সকাল সাতটা থেকে মানবজাতির সার্বিক মঙ্গলের জন্য মমিকরণের উপকারিতা লিখে চলেছি।
-এই আমি, আর আগের আমি থাকবনা। বউটাও আমার মহা দজ্জাল। দিনরাত জ্বালিয়ে মারে। আমি নিশ্চিত যে কোনকিছুই ভালভাবে যাচ্ছেনা কেন জানি। সত্য কথা বলতে, উনিশ শতকের এই যান্ত্রিক-নিরষ জীবন নিয়ে খুবই বিতৃষ্ণায় ভুগছি।
আচ্ছা ২০৪৫ সালে আম্রিকার প্রেসিডেন্ট কে হবে? এই চিন্তায়ইতো আমার ঘুম হারাম হবার জোগাড়।
নাহ!
-শেইভ করে, কফিটা গিলেই পনোনারের বাড়িতে যেতে হবে আগামী একশ বছরের জন্য মমি হতে।
.
Original – Some words with Mummy.

প্রত্যুত্তর দিন

আপনার ইমেইল প্রকাশিত হবে না। Required fields are marked *