দ্য সিগন্যালম্যান ( The Signalman)
অধ্যায় – ১
একটি অদ্ভুত সাক্ষাৎ
“হ্যালো”
আমি যখন সিগনালম্যানকে ডাকছি তখন আমি পাহাড়ের ওপরে। কিন্তু সে ওপরে তাকালো না। সে টানেলের গভীরে চলে যাওয়া রেল লাইনের দিকে তাকাচ্ছিল।
“হ্যালো, এই যে ওখানে” আমি আবারো ডাকলাম।
তারপর সে উপরে তাকালো এবং আমাকে দেখতে পেলো।
“রাস্তাটা কোথায়?” আমি জিজ্ঞাস করলাম “কিভাবে আমি নিচে নেমে এসে আপনার সাথে কথা বলতে পারি?”
সে উত্তর দিলো না। ঠিক তখনই সুড়ঙ্গের ভিতর হতে একটা ট্রেন বেরিয়ে আসলো। সিগনালম্যানের হাতে একটা পতাকা ছিলো, সে ওটা প্রদর্শন করলো যখন ট্রেনটা চলে গেল। আমি আবারও প্রশ্ন করলাম রাস্তাটা কোথায়। সে তার পতাকা দিয়ে পাহাড়ে ইশারা করলো এবং তখন আমি নিচে যাবার রাস্তাটা দেখতে পেলাম।
“ঠিকাছে, ধন্যবাদ”– আমি উচ্চস্বরে বললাম।
ভেজা-স্যাঁতসেতে রাস্তা মাড়িয়ে আমি নিচে নেমে এলাম। সিগনালম্যান পাহাড়ের পাদদেশে আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলো । সে রেললাইনের মাঝেই দাঁড়িয়ে ছিলো, চেহারায় কেমন যেনো ইতস্তত ভাব।
জায়গাটা বেশ নির্জন আর নীরব। উঁচু প্রাচীরগুলো আকাশের বেশিরভাগই ঢেকে দিয়েছে, তাই খুব একটা সূর্যালোক আসেনা এখানে যার ফলে বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। আমি রেললাইনের পথে তাকালাম এবং গাড় অন্ধকারে পরিপূর্ণ সুড়ঙ্গপথের মুখেই লাল বাতি দেখতে পেলাম। আমি লোকটার দিকে এগিয়ে গেলাম, কিন্তু সে আমার কাছে থেকে কিছুটা দূরে চলে গেলো। আমার দিকে কেমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়েছিলো ।
“এটা খুব নির্জন জায়গা” আমি বললাম “আপনি নিশ্চয়ই খুব বেশি দর্শনার্থী পান না। আমি কি আপনাকে বিরক্ত করছি?”
সে কোনো জবাব দিলো না, কিন্তু সুড়ঙ্গের সম্মুখে থাকা লাল বাতিটার দিকে তাকালো।
“আপরি বাতিটার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?” আমি জিজ্ঞাসা করলাম। “এটা কি আপনার কাজেরই একটা অংশ?”
সে খুব নীচুস্বরে বলে উঠলো “হ্যাঁ, জানেন না?”
হঠাৎই আমার মস্তিষ্কে ভয়ানক চিন্তাটা আসে যে লোকটা কোনো মানুষ নয়, সে একটা ভূত । তাই আমি একটু দূরে সরে যাই। তখন লোকটার চোখে একটা ভীতি লক্ষ্য করি।
“আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন?” জিজ্ঞাস করলাম।
“আমি ভাবছিলাম সম্ভবত আপনাকে আগে কোথাও দেখেছি”
“কোথায়?”
সে লাল বাতিটার দিকে ইশারা করলো “ওখানে”
“কেন? আমি আগে কখনো ওখানে যাই নি”
“না। হতে পারে যাননি”
তারপর সে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো । আমাকে সিগনালবক্সের ভেতরে নিয়ে গেল সে।
“আপনার কি এখানে খুব বেশি কাজ থাকে?” আমি প্রশ্ন করলাম।
“না, খুব বেশি না। তবে আমাকে খুব সতর্ক আর খেয়ালী হতে হয়” সে প্রতুত্তরে জানালো।
“আপনার দায়িত্বটা কি?”
“আমি সিগনাল পরিবর্তন করি, ওই সুইচগুলো টানি এবং পরীক্ষা করি লাল বাতিটা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না,” সে ব্যাখা করলো।
“আপনি কখনো একাকীত্বে ভোগেন না?” আমি জানতে চাইলাম।
“না, আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।”
“কখনো সূর্যের আলোতে বেরোন না?”
“হ্যাঁ, কখনো কখনো বেরোই আবহাওয়া ভালো থাকলে। কিন্তু আমাকে সবসময়ই বৈদ্যুতিক ঘন্টা আর লাল বাতিটার দিকে খেয়াল রাখতে হয়।”
আমি সিগনালবক্সের ভিতরটা দেখতে লাগলাম। আগুন জ্বালবার একটা জায়গা সেখানে আগুন জ্বলছে , একটা বার্তা আদান-প্রদান করার টেলিগ্রাফ যন্ত্র এবং ছোট একটা বৈদ্যুতিক ঘন্টা।
“আমি যুবক থাকাকালে বিজ্ঞান পড়েছি,” সে আমাকে জানালো।
হঠাৎ ঘন্টাটি বেজে উঠলো। সে বার্তা পেলো এবং তার জবাব দিলো সাথে সাথে । তারপর সে তার পতাকা প্রদর্শন করতে লাগলো ট্রেন যাবার পর। সে সবকিছুই নিখুঁতভাবে করছিলো। আমাদের কথাবার্তা চলাকালেই সে দুবার দরজা খুলে লাল বাতিটা দেখলো। সে ফিরে এলো আগুনের কাছে উদ্বিগ্ন চেহারা নিয়ে । কেন ,আমি জানতে চেয়েছিলাম, প্রশ্ন করলাম “আপনি কি সুখী?”
“এককালে আমি সুখী ছিলাম” সে জবাব দিলো “কিন্তু এখন আমি বেশ চিন্তিত, স্যার।”
“কেন? সমস্যাটা কি?”
“বেশ কঠিন ব্যাপারটাকে বলা । আপনি যদি আবার আসেন, আমি আপনাকে বলার চেষ্টা করবো।” সে বললো।
“কখন আসবো আমি?”
“আমি এখানে আবার আগামীকাল রাত দশটায় থাকবো, স্যার।”
“আমি তাহলে এগারোটার দিকে আসবো” আমি জানালাম।
বাহিরে অন্ধকার ছিলো , তাই সে আমাকে তার বাতি দিয়ে পথ দেখালো।
‘আর কখনো “হ্যালো” বলবেন না দয়া করে’ সে বললো।
“ঠিকাছে।”
“এবং কাল রাতে যখন আসবেন ডাকাডাকি করবেন না। আচ্ছা, আজ সন্ধ্যায় কেন “হ্যালো, এই যে ওখানে ” বলে ডেকেছিলেন?’ সে প্রশ্ন করলো।
“আমি জানি না। আমি কি হুবহু এটাই বলেছি?”
“হ্যাঁ, আমার খুব ভালোভাবে মনে আছে।”
“আমার মনে হয়, আপনাকে নিচে দেখেছিলাম বলেই ডেকেছি’ আমি বললাম ।
“এটাই কি একমাত্র কারণ?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই। কেনো?”
“আপনার মনে হয় না এখানে কোন অতিপ্রাকৃত কারণ ছিলো?” সে জানতে চাইলো।
“না”
তারপর আমরা একে অপরকে শুভরাত্রি জানালাম এবং আমি আমার হোটেলে ফিরে আসলাম।
অধ্যায় – দুই
বিপদ
আমি পরবর্তী রাতের এগারোটায় ফিরে আসলাম। সিগনালম্যান আমার জন্য বাতিসহ অপেক্ষা করছিলেন। “দেখলেন , আজ কিন্তু ডাকিনি” আমি হেসে বললাম। আমরা সিগনালবক্সে হেঁটে গেলাম এবং আগুনের ধারে বসলাম।
“আমি আপনাকে বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কি আমাকে বিরক্ত করে,’সে খুব ক্ষীনকন্ঠে শুরু করলো। “গতকাল সন্ধ্যায় আমি ভেবেছিলাম আপনি অন্য কেউ।”
“কে?”
“আমি জানি না।”
“সে কি আমার মতই দেখতে?”
“আমি তার চেহারা কখনো দেখিনি কারণ তার বাম বাহু সবসময় তা ঢেকে রাখতো। সে তার ডান হাত এভাবে নাড়তো” তার সে তার নিজের হাত ভয়ানকভাবে নাড়িয়ে দেখাতে লাগলো, যেন সে বলতে চাচ্ছে ‘আমার পথ থেকে সরে যাও’
‘এক রাতে,’ সে বলে চলল। “চাঁদ আলোতে ঝলমল করছিলো আর আমি এখানে বসে ছিলাম। হঠাৎই একটা কন্ঠে শুনলাম “হ্যালো, এই যে ওখানে”। আমি দরজা খুলে বাইরে তাকালাম। টানেলের সামনে লাল বাতিটার পাশে ওখানটায় কেউ একজন ছিলো যে হাত নাড়ছিলো “এদিক দেখো ,এদিক দেখো”বলে চিৎকার করে। আমি আমার বাতিটা নিয়ে তার দিকে দৌড়ে গেলাম ‘কি হয়েছে? কি সমস্যা?” আমি জানতে চাইলাম। আমি আমি আশ্চর্যবোধ করলাম , সে কেন বাহু দিয়ে তার চোখ ঢাকছে। আমি তার কাছে গিয়ে আমার হাত উঠালাম তার বাহু সরাতে — কিন্তু সে ওখানে ছিলো না।”
“সে কি সুড়ঙ্গের ভিতরে চলে গিয়েছিল?”– আমি প্রশ্ন করলাম।
“না। আমি দৌড়ে গিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকেছিলাম এবং লন্ঠন দিয়ে চারিদিক দেখেছি, কিন্তু ওখানে কেউ ছিলো না। আমি ভয় পেয়ে ওখান থেকে দ্রুত পালিয়ে এসে আমার বক্সে ঢুকি। আমি টেলিগ্রাফে একটা বার্তা পাঠাই “সংকেতবার্তা পেয়েছি। কোন গন্ডগোল হয়েছে?” ওপাশ থেকে জবাব আসলো “সব ঠিকঠাক আছে।”
আমি বললাম সেই ব্যাক্তিটা হয়তো আপনার দৃষ্টিভ্রম ছিলো।
“এক সেকেন্ড , স্যার” সিগনালম্যান আমার বাহু ধরে বলে উঠলো। “ছ’ঘন্টা পর এই লাইনে ভয়াবহ একটা দূর্ঘটনা ঘটে। তারা (কর্তৃপক্ষ) অনেকগুলো মৃত আর আহত লোক বের করে আনে ওই সুড়ঙ্গ হতে।”
“কিন্তু এটা শুধু কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে” আমি বললাম। “খুব উদ্ভট একটা কাকতালীয় ঘটনা”
“দুঃখিত স্যার, আমি এখনো শেষ করিনি”
“আমি দুঃখিত” আমি বললাম।
“এটা একবছর আগের ঘটনা। ছয়-সাত মাস পর আমি ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠি। তারপর একদিন ভোরে আমি আবার ভূতটাকে দেখি।”
“এটা কি ডাকাডাকি করছিলো?” আমি জানতে চাইলাম।
“না। চুপচাপ ছিলো।”
“সে কি বাহু নাড়ছিলো? “
“না। ওটার হাত তার মুখের সামনে ছিলো -এভাবে” সে তার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দেখাতে লাগলো।
“আপনি ওটার কাছে গিয়েছিলেন?”
“না। আমি এসে এখানে বসে ছিলাম, খুব ভয় পেয়েছিলাম। “যখন আমি দরজার দিকে যাই, ভূতটা ছিলো না।
“এবং পরে? এবার কি কিছু ঘটেছিলো?” আমি আবার প্রশ্ন করলাম।
“হ্যাঁ, সেদিন সুড়ঙ্গ থেকে একটা ট্রেন বেরিয়ে যাচ্ছিল , এবং আমি একটা বগির জানালা দিয়ে দেখলাম লোকজন খুব বিচলিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ড্রাইভারকে ট্রেনটা থামাতে সংকেত দিলাম। ট্রেনটা যখন থামলো তখন আমি দৌড়ে গেলাম ওটার কাছে, আর ভয়নাক চিৎকার শুনতে পেলাম। একজন সুন্দরী যুবতী বগিটার ভেতর মারা যাচ্ছিল । লোকজন যুবতীকে এখানে নিয়ে এলো এবং ঠিক আপনার আর আমার মাঝের ফাঁকা জায়গাটাতে রেখেছিলো।
আমি ভয় পেয়ে চেয়ারটাকে পিছনে ধাক্কা দিলাম।
“এটা সত্য, স্যার। ঠিক এটাই ঘটেছিলো। এখন শুনুন তাহলে আপনি বুঝবেন কেন আমি উদ্বিগ্ন। ভূতটা এক সপ্তাহ আগে ফেরত এসেছে এবং আমি ওটাকে দু’তিনবার দেখেছি। “
“সবসময়ই কি লাল বাতিটার সাথে?”– আমি জানতে চাইলাম।
“হ্যাঁ , বিপদসংকেত বাতিটায়।”
“কি করে সে?”
“এটা হাত নাড়ায় – এভাবে” সে উত্তর দিলো। তারপর অনুকরণ করে দেখাতে লাগলো, যেন কেউ বলছে “আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও” । তারপর সে আবার বললো “আমার কোনো শান্তি বা বিশ্রাম ছিলনা। এটা আমাকে বারংবার ডাবছিলো – “হ্যালো, এই যে ওখানে! এদিক দেখো!” এবং আমার ঘন্টিটা বাজাচ্ছিল!’
“এটাই কি বেল বাজাচ্ছিল যখন আমি গতরাতে আপনার এখানে ছিলাম?” — আমি তাকে প্রশ্ন করলাম।
“দুইবার”– সে জানালো।
“আরেহ! এটা আপনার কল্পনা! আমি ঘন্টিটার দিকে লক্ষ্য করছিলাম এবং শুনছিলাম , কিন্তু এটা তখনই বেজেছে যখন স্টেশন থেকে আপনাকে ডাকা হয়েছে।”
সিগনালম্যানে মাথা নাড়লো। “না, ভূতের ঘন্টি বাজানোটা অন্যরকম। আপরি এটা দেখতে বা শুনতে পারেননি – কিন্তু আমি পেরেছি।”
“এবং আপনি যখন বাইরে তাকিয়েছিলেন তখন ভূতটা ছিলো?”
“হ্যাঁ, দুইবার”
“আপনি কি এখন আমার সাথে দরজার কাছে এসে এটার খোঁজ করবেন?”
সে দরজার কাছে এলো এবং আমি দরজাটা খুললাম।
“আপনি দেখছেন ওটাকে?” আমি প্রশ্ন করি।
“নাহ, ওটা নেই ওখানে।”
“আচ্ছা”– আমি বললাম।
আমরা দরজা বন্ধ করে ভিতরে এসে বসলাম। এখন আমি নিশ্চিত ছিলাম আসলে সেখানে কোনো ভূত ছিলো না।
“আমি ধারনা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন” সে বললো “যে, আমি একটা প্রশ্ন নিয়ে বিভ্রান্ত : ভূতটা আসলে কি বোঝাতে চাইছে?”
“না, বুঝিনি”
“ভূতটা আমাকে কিসের বিপদ সংকেত দিচ্ছে? বিপদটা কি? কোথায় হবে এটা? কোনো ভয়ানক বিপদ ঘটতে চলেছে কিন্তু কি করতে পারি আমি? আমি তো স্টেশনকে বার্তা দিতে পারবো না : “বিপদ! সতর্ক থেকো”
তারা জানতে চাইবে : “কি বিপদ? কোথায়?” আর আমি বলবো : “জানি না, কিন্তু সতর্ক থেকো!” ওরা আমাকে পাগল ভাববে।’
অসহায় সিগনালম্যানটিকে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মনে হলো। সে তার কালো চেয়াটায় থাকা রুমাল নিয়ে মুখ আর হাত মুছলো।
“ভূতটা আমাকে কেনো বলছে না বিপদটা কোথায় ঘটবে? কেন সে বলছে না আমি কিভাবে বিপদটাকে ঠেকাতে পারি? কেনই বা যুবতীটি বিপদে পড়েছিলো? হায় ইশ্বর, আমি শুধু নিতান্ত একজন সিগন্যালম্যান! কেন আমাকে বিপদে ফেললে!”
আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। আমি বললাম আপনাকে আপনার কর্তব্য অবশ্যই সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করতে হবে , যতটুকু সম্ভব নিখুঁতভাবে । সে কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে আসলো এবং আমি প্রস্তাব দিলাম রাতটা তার সাথে কাটিয়ে দেবার।
“না, ঠিকাছে, ধন্যবাদ আপনাকে” সে বললো “কাল সূর্য ডোবার একঘন্টা পর এসো আবার।”
আমি তার কাছ থেকে সকাল দুটোয় চলে এলাম। আমি হোটেলে ভাবছিলাম কি করা যায়। সিগনালম্যানটি যথেষ্ট বুদ্ধিমান, সতর্ক এবং তার কাজের প্রতি মনোযোগী। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তুলেছে । কিভাবে সে তার কাজ আবার ভালোভাবে করতে পারে? তাই আমি শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম তাকে শহরের সবচেয়ে ভালো ডাক্তার দেখাবো।
পরেরদিন সন্ধ্যায় আমি একটু তাড়াতাড়ি গেলাম। সূর্যাস্ত খুব শীঘ্রই হবে এমন সময় পৌঁছুলাম ওখানে। আমার হাতে একঘন্টা সময় ছিল, সিগনালম্যান আসার আগে। তাই একটু হাঁটাহাটি করবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু যখনই আমি রেললাইন অনুসরন করে তাকালাম তখনই আমি সুড়ঙ্গমুখে লোকটাকে দেখি। তার বাম বাহু চোখের সামনে এবং ভয়ানকভাবে হাত নাড়িয়ে ইশারা করছে।
আমি কতটুকু ভয় পেয়েছি তা বর্ণনাতীত। কিন্তু ভয়টা তখনই কাটতে শুরু করলো যখন একটা লোককে দেখতে পেলাম, ভূতটাকে নয়। সে আসলেই একজন মানুষ ছিলো, এবং তার আশে-পাশে আরও লোকজন দেখা যাচ্ছিল। লাল বাতিটা ঝলমল করছিলো না। এর সামনে ছোট কিছু একটা চাদরাবৃত করে রাখা ছিলো। আমি দৌড়ে এগিয়ে গেলাম ।
“কি হয়েছে এখানে?”– লোকগুলোকে জিজ্ঞেস করলাম।
“সিগনালম্যান মারা গেছে, স্যার”– তাদের একজন জবাব দিলো
“কি? যে লোকটাকে আমি জানতাম সে?”
“আপনি যদি তাকে জানেন, তাহলে আপনি চিনতে পারবেন।” লোকটা চাদরে সরিয়ে দিলো।
“হায়, কিভাবে ঘটলো এটা?” আমি কান্না করতে শুরু করলাম যখন সিগনালম্যানের লাশটাকে চিনতে পারলাম।
সুড়ঙ্গের মুখে থাকা লোকটা এগিয়ে আসলো এবং বললো “আজ সকালে একটা ট্রেন তাকে চাপা দিয়ে যায়। ট্রেন সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসতেই সে নজরে পড়ে, ট্রেনের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো সে। ভদ্রলোককে বলো, টম।”
‘আমিই সেই ট্রেনের চালক, স্যার।” টম বলল। “আমি সুড়ঙ্গের শেষ দিকে আসতেই সিগনালম্যানকে দেখি। কিন্তু তখন গতি কমানোর সময় অবশিষ্ট ছিলো না। সে আমার ট্রেনের শিষ শুনতে পায়নি, তাই আমি খুব জোরে চিৎকার করি।”
“কি বললে তুমি?”
“আমি বললাম, “হ্যালো, এই যে ওখানে! দেখো এদিকে! দেখো এদিকে! আমার পথ থেকে সরে যাও!” আমি তাকে বার বার ডাকছিলাম এবং আমার চোখের বাহু দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম কারণ আমি দৃশ্যটা দেখতে চাইনি এবং এই হাতটা নাড়ছিলাম – এভাবে – কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে…”
—————- সমাপ্ত —————–
মূল – চার্লস ডিকেন্স