আমরা চাঁদে যাব বলে ঠিক করেছি
মূলঃ জন এফ কেনেডি
সভাপতি পিটজার, জনাব সহ সভাপতি, গভর্নর, কংগ্রেসম্যান থমাস, সিনেটর উইলি এবং কংগ্রেসম্যান মিলার, মিস্টার ওয়েব, মিস্টার বেল, বিজ্ঞানীরা, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দঃ
আমি প্রশংসা করছি, এই জন্য আপনাদের সভাপতি আমাকে একজন সম্মানিত ভিজিটিং অধ্যাপক বানিয়েছেন এবং আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে আমার প্রথম ভাষণ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হবে।
আমি এখানে এসে আনন্দিত হয়েছি, এবং বিশেষ করে এই উপলক্ষে এখানে এসেছি বলে আনন্দিত হয়েছি।
আমরা মিলিত হই কলেজে জ্ঞানের জন্য, অগ্রগতির জন্য শহরে মিলিত হই এবং শক্তির জন্য রাজ্যে। জ্ঞান এবং অজ্ঞানতা উভয়ের এই সমতে আমরা এই তিনটির প্রয়োজনে একত্রে দাঁড়াই, কারণ আমরা মিলিত হই এক ঘণ্টার পরিবর্তন ও পরীক্ষার, এক যুগের আশা ও ভয়ের। আমাদের জ্ঞান যতই বাড়ে, আমাদের অজ্ঞানতা ততই বৃদ্ধি পায়।
যদিও এটাই সত্য যে, বিশ্বের বেশির ভাগ নাম জানা বিজ্ঞানী এখনও বেঁচে আছেন এবং কাজ করে যাচ্ছেন, যদিও আমাদের জাতির নিজস্ব বৈজ্ঞানিক জনশক্তি প্রতি ১২ বছরে দ্বিগুণ হচ্ছে, যা আমাদের দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির ৩ গুণ, তবুও যা অজানা, উত্তরহীন প্রশ্ন বা অসমাপ্ত, তার বিশালতা আমাদের সমষ্টিগত চেষ্টার থেকেও বেশি। কোন মানুষই বলতে পারবে না আমরা কতদূর এসেছি বা কতদ্রুত এসেছি, কিন্তু সংক্ষেপে বলতে চাইলে, আপনাকে গত ৫০ হাজার বছরের মানুষের ইতিহাসকে অর্ধ শতাব্দীতে নিয়ে যেতে হবে। এই অর্থে, প্রথম ৪০ বছর সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি, শুধুমাত্র শেষদিকে উন্নত মানুষ কিভাবে পশুর চামড়া দিয়ে নিজের দেহ ঢাকতে শিখেছে। তারপর এই ১০ বছরে, মানুষ গুহা থেকে বের হয়ে নিজের অন্যান্য বাসস্থান তৈরি করে। মাত্র পাঁচ বছর আগে মানুষ লিখতে শিখে এবং চাকার গাড়ির ব্যবহার শিখে। খ্রিস্টধর্মের সূচনা হয় আজ থেকে ২ বছরের কম আগে। ছাপার কল এসেছে এই বছরে, ২ মাসও হয়নি, মানবজাতির এই ৫০ বছরের ইতিহাসে, বাষ্পকল শক্তির নতুন উৎসের সন্ধান দিয়েছে।
গত মাসে বৈদ্যুতিক বাতি, টেলিফোন, মোটরগাড়ি এবং বিমান ব্যবহার শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে আমরা পেনিসিলিন, টেলিভিশন এবং পারমাণবিক শক্তিকে আমরা তৈরি করেছি এবং এখন যদি আমেরিকার নতুন মহাকাশযান শুক্র গ্রহে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, আমরা আক্ষরিক অর্থেই আজকের মধ্যরাতের পূর্বে তারার জগতে পৌঁছাতে সক্ষম হব।
এটি শ্বাসরুদ্ধকর এক গতি, এবং এই গতি সাহায্য করতে পারে না, কিন্তু নতুন সমস্যা তৈরি করে, কারণ এটা নতুন ও পুরাতন অজ্ঞতা দেখিয়ে দেয়, দেখিয়ে দেয় নতুন সমস্যা ও বিপদ। নিশ্চিতভাবে মহাকাশ যুগের প্রথম দিনগুলো অর্থ, কষ্ট এবং পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়।
তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যখন আমাদের মাঝে কেউ কেউ চাইবে আমরা যেখানে রয়েছি, সেখানে রয়ে যেতে, একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য, একটু অপেক্ষা করার জন্য। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামের এই দেশ, টেক্সাস নামের এই রাজ্য, হিউস্টন নামের এই শহর তাদের দ্বারা গড়ে ওঠে নাই, যারা অপেক্ষা করেছিল, বিশ্রাম নিয়েছিল এবং নিজের পিছনে তাকিয়ে ছিল। যারা সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে চায়, তারা এই দেশকে জয় করেছে–এবং মহাকাশের ক্ষেত্রেও তাই হবে।
বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিটে উইলিয়াম ব্যান্ডফোর্ড ‘প্লাইমাউথ বে কলোনি’র প্রতিষ্ঠা নিয়ে বলার সময় বলেছিলেন যে সকল মহৎ এবং সম্মানজনক কার্যাবলীর সাথে থাকে বড় বড় ঝামেলা, যথাসাধ্য সাহস নিয়ে উভয়কে মোকাবেলা এবং অতিক্রম করতে হয়।
আমাদের এই ছোট ইতিহাস যদি আমাদের কোন শিক্ষা দেয়, এটা সেই মানুষ, যে তার জ্ঞান এবং অগ্রগতির জন্য দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ এবং লক্ষ্যচ্যুত হবে না।
মহাকাশ পরিব্রাজনের ইতিহাস সামনে এগিয় যাবে, আমরা এতে যোগ দেই বা না দেই তাতে কিছু যায় আসে না। সর্বকালের সেরা রোমাঞ্চের মধ্যে এটি একটি এবং এমন কোন জাতি নেই যারা আশা করে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিবে এই মহাকাশ জয়ের দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে পারে না।
আমাদের আগে যারা ছিলেন, তারা নিশ্চিত করেছেন যেন এই দেশ শিল্পায়নের প্রথম ঢেউর উপর উঠতে পারে, আধুনিক উদ্ভাবন এবং পারমাণবিক শক্তির প্রথম স্রোতের উপর, এবং এই প্রজন্ম সামনের মহাকাশযুগে পিছিয়ে পরতে চায় না। আমরা এর অংশ হতে চাই- আমরা এর নেতৃত্ব দিতে চাই। বিশ্বের চোখ এখন মহাকাশের দিকে, চাঁদের দিকে এবং দূরের গ্রহরাজির দিকে, এবং আমরা শপথ করছি, আমরা এটা বৈরী কোন পতাকা দ্বারা শাসিত হতে দেখতে চাই না, দেখতে চাই মুক্তি আর শান্তির পতাকা দ্বারা শাসিত হতে। আমরা শপথ করি, আমরা গণবিদ্ধংসী অস্ত্র দ্বারা এই মহাকাশকে পূর্ণ হয়ে যেতে দেখতে চাই না, পূর্ণ দেখতে চাই জ্ঞান আর পারস্পারিক বোঝাপড়ার উপকরণ দ্বারা।
জাতির এই শপথ তখনই পূর্ণ হবে, যখন আমাদের জাতি প্রথম হয়, এবং আমরা যদি প্রথম হতে চাই। সংক্ষেপে, বিজ্ঞান এবং শিল্পে আমাদের নেতৃত্ব, শান্তি আর নিরাপত্তায় আমাদের আশা, নিজেদের ও অন্যান্যদের পক্ষে আমাদের বাধ্যবাধকতা, সবাই আমাদের চায় এই চেষ্টার জন্য, এই রহস্য সমাধান করার জন্য, মানবজাতির কল্যাণের নিমিত্তেই সমাধান করার জন্য- বিশ্বের নেতৃস্থানীয় মহাকাশচারী জাতি হওয়ার জন্য।
আমরা এই সাগরে পাল তুলে যাত্রা শুরু করেছি, এই জন্য যে নতুন জ্ঞানার্জন করতে হবে, নতুন অধিকারকে জয় করতে হবে এবং সেগুলো জয় করতেই হবে, এবং সকল মানুষের উন্নতিতে ব্যবহার করতে হবে। মহাকাশবিজ্ঞান পরমাণু বিজ্ঞানের এবং সকল প্রযুক্তির মত নিজের ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা নেই, এটা শুভ না অশুভ শক্তি হবে তা মানুষের উপর নির্ভর করে, এবং শুধুমাত্র যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে, তবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব, এই নব মহাসাগর কি শান্তির সাগর হবে নাকি যুদ্ধের ভয়ংকর মঞ্চে পরিণত হবে। আমি বলছি না যে, আমাদের সাগর বা ভূমির মতো মহাকাশকে অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অরক্ষিত অবস্থায় যেতে হবে বা যাওয়া উচিত, কিন্তু আমি বলি মানুষ আমাদের এই পৃথিবীতে নিজের হাত প্রসারিত করতে গিয়ে যে ভুল করেছে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটিয়েই মহাকাশকে পরিভ্রমণ করা উচিত কিংবা যুদ্ধের অনল না জ্বেলেই গবেষণা করা উচিত।
মহাকাশযাত্রার বিষয়ে কোন কোলাহল নেই, নেই কোন কুসংস্কার, নেই জাতীয় ভেদাভেদ। এই জয় সমগ্র মানবজাতির ভালো আশা করতে পারে এবং এই শান্তিপূর্ণ পারস্পারিক সহযোগিতা আর কখনও আসবে না। অএনেক জিজ্ঞাসা করতে পারে, চাঁদ কেন? কেন এটাই আমরা লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছি? এবং তারা এটাও জিজ্ঞাসা করতে পারে কেন সবথেকে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ করা হয়? ৩৫ বছর আগে কেন বিমানে করে অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়া হল? কেন রাইস টেক্সাসের?
আমরা চাঁদে যাব বলে ঠিক করেছি। আমরা এই দশকে চাঁদে যাব বলে ঠিক করেছি এবং অন্যান্য কাজ করব, এই জন্য যে, সেগুলো সহজ। বরং এই জন্য যে, সেইগুলো কঠিন। কারণ এই লক্ষ্য আমাদের আমাদের ক্ষমতা এবং দক্ষতা সংগঠন এবং পরিমাপ করতে সাহায্য করবে। কারণ এখানে চ্যালেঞ্জ একটাই যে আমরা নিজের ইচ্ছায় তা গ্রহণ করছি, আমরা না পিছিয়ে দিতে অনিচ্ছুক, এবং তা আমরা জিততে চাচ্ছি এবং অন্যরাও তা চাচ্ছে।
এই সকল কারণের জন্য আমি গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাদের মহাকাশের কার্যক্রমের গতি বাড়িয়ে দিব, এবং এটাই হবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার মেয়াদের ভিতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা দেখেছি মানবজাতির ইতিহাসে সবথেকে বড় এবং জটিল অভিযানের জন্য নির্মিত নানা স্থাপনা। স্যাটার্ন সি-১ রকেটের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের ফলে আমরা ভূমির কম্পন টের পেয়েছি এবং বাতাসকে বিদীর্ণ হতে দেখেছি। জন গ্লেনের অ্যাটলাসের থেকেও বহুগুণ শক্তিশালী, ভূমির উপর ১০০০০ অটোমোবাইলের সমান শক্তি সৃষ্টি করে তাদের যন্ত্র। আমরা সেই জায়গা দেখেছি, যেখানে অনেকগুলো এফ-১ রকেট ইঞ্জিন ( যা একেকটি স্যাটার্ন রকেটের ৮ টি ইঞ্জিনের সমান শক্তিশালী ) একসাথে করা হবে উন্নতর স্যাটার্ন মিসাইল বানাতে, এইগুলোকে একত্রিত করা হয়েছে কেপ ক্যানাভেরালে নির্মাণাধীন একটি ভবনে, যেটি ৪৮ তলা ভবনের সমান উঁচু, শহরের একটি ব্লকের সমান চওড়া এবং এই মাঠের দ্বিগুণ লম্বা।
গত ১৯ মাসে কমপক্ষে ৪৫ টি কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীকে পরিভ্রমণ করেছে। এর ভিতর ৪০টির মত ছিল ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি’ এবং সেগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের নির্মিত উপগ্রহগুলো থেকে আরও বেশি উন্নত এবং পৃথিবীর মানুষকে আরও বেশি তথ্য দিতে পেরেছে।
শুক্রগ্রহের পথে চলা মহাকাশযান মেরিনার মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে সব থেকে জটিল যন্ত্র। সেই নিক্ষেপের যথার্থতা অনেকটা কেপ ক্যানাভেরাল থেকে একটি মিসাইল নিক্ষেপ করে এই স্টেডিয়ামের ৪০ গজের রেখার ভিতর ফেলার মত।
ট্রানসিট উপগ্রহগুলো সাগরে আমাদের জাহাজগুলোকে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করছে। টাইরোজ উপগ্রহগুলো আমাদের হ্যারিকেন এবং ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারছে, এবং দাবানল আর হিমবাহ নিয়েও একই কাজ করতে পারবে।
আমাদের ব্যর্থতা আছে, কিন্তু অন্যদেরও তা রয়েছে, তারা স্বীকার না করলেও। এবং তারা কম জনমুখী হবে।
এটা নিশ্চিত, আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি এবং মনুষ্যবাহী মহাকাশযানের ক্ষেত্রে কিছুকাল পিছিয়ে থাকব। কিন্তু আমরা পিছিয়ে থাকার জন্য বসে নেই, এবং এই দশকের ভিতর, আমরা তা পূরণ করে ফেলব ও সামনে এগিয়ে যাব।
আমাদের বিজ্ঞান ও শিক্ষার অগ্রগতি পূর্ণ হবে, মহাশূন্য এবং পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের নতুন জ্ঞান দ্বারা; আমাদের শিক্ষালাভ, পর্যবেক্ষণ এবং চিত্রায়নের নতুন পদ্ধতি দ্বারা; শিল্প কলকারখানা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, বাসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত নতুন যন্ত্র এবং কম্পিউটারের দ্বারা। রাইসের মত কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো এই অর্জনের ফসল তুলবে।
মহাকাশ জয়ের এই চেষ্টা এখনও আঁতুড় ঘরে রয়েছে, কিন্তু তা অনেক উদ্যোক্তা তৈরি করেছে এবং হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। মহাকাশবিজ্ঞান এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত শিল্পকারখানাগুলো বিনিয়োগ এবং দক্ষ জনগোষ্ঠীর চাহিদা সৃষ্টি করছে। এই শহর, এই রাজ্য, এই অঞ্চল এই প্রসারের অংশ। একদা যা ছিল পশ্চিমের রণাঙ্গনের একটি দূরবর্তী কেন্দ্র, আজ তা হবে বিজ্ঞান এবং মহাকাশবিজ্ঞানের নতুন রণাঙ্গন। হিউস্টন, আপনাদের শহর হিউস্টন, এর মনুষ্যবাহী রকেট উৎক্ষেপণকেন্দ্রসহ একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলকেন্দ্রে পরিণত হবে। আগামী ৫ বছর ন্যাশনাল এরোনটিক্স এন্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই অঞ্চলে তার বৈজ্ঞানিক এবং প্রকৌশলী সংখ্যা দ্বিগুণ করবে, তার বেতন ও খরচ বাবদ এই বাজেট বছরে ৬ কোটি ডলার দিবে; ২০ কোটি ডলার খরচ করবে কারখানা ও গবেষণাগারের জন্য; এবং নতুন মহাকাশযাত্রার নানা খরচের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার এই শহরের এই কেন্দ্রে খরচ করবে।
এটা ঠিক, এইসবের জন্য আমাদের প্রচুর অর্থ খরচ হবে। এই বছরের মহাকাশ বাজেট ১৯৬১ সালের জানুয়ারিতে বাজেট যা ছিল তার থেকে তিন গুণ বেশি এবং এটা গত ৮ বছরের মিলিত মহাকাশ বাজেটের থেকে বেশি। এই বাজেট এখন দাঁড়ায় বিশাল অংকে প্রতি বছরে ৫৪০ কোটি ডলার- যদিও আমরা প্রতি বছর সিগারেটের পিছনে যা ব্যয় করি তার থেকে কম। এই ব্যয় সহসা আরও বেড়ে যাবে, জনপ্রতি প্রতি সপ্তাহে ৪০ সেন্ট থেকে জনপ্রতি প্রতি সপ্তাহে ৫০ সেন্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি পুরুষ, মহিলা এবং শিশুর জন্য, এই জন্য আমরা এই কর্মসূচিকে সর্বোচ্চ জাতীয় গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি যদিও বুঝতে পারছি এটা অনেকটা বিশ্বাস এবং স্বপ্নের মিশেল, কারণ আমরা জানি না আমাদের জন্য কি শুভফল অপেক্ষা করছে।
সহনাগরিকগণ, আমাকে যদি বলতে হয় যে, আমাদের এই হিউস্টনের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র থেকে ২,৪০,০০০ মাইল দূরে চাঁদে যেতে হবে, ৩০০ ফুট উঁচু দানবীয় রকেট, এই ফুটবল মাঠের সমান লম্বা, কিছু ধাতু সংকর দিয়ে তৈরি, যার ভিতর আবার কিছু এখনও উদ্ভাবন করা হয় নাই, এখন পর্যন্ত জ্ঞাত তাপ বা ধকলের কয়েকগুণ বেশি তাপ নিতে সক্ষম, নিখুঁততম ঘড়ির থেকেও নিখুঁত; অজানা এক জ্যোতিষ্কর দিকে একটি ক্লান্তিহীন যাত্রায় উৎক্ষেপণ, পথ প্রদর্শন, নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ, খাদ্য ও টিকে থাকা এবং তারপর পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে আসা বায়ুমণ্ডলে ঘণ্টায় ২৫০০০ মাইল বেগে পুনঃপ্রবেশ করা, যার ফলে সৃষ্টি হবে সূর্যের তাপের অর্ধেক তাপ- আজকের মত গরম- এই সব কাজ করা, সঠিক ভাবে করা, এবং এই দশকের সবার আগে করতে হবে —– তাহলে আমাদের সাহসী হতে হবে।
আমিই সেইজন যে সব কাজ করছে, তাই আমরা চাই আপনাদের এক মিনিটের জন্য ঠাণ্ডা হতে। (হাসি)
তবুও, আমি মনে করি, এই কাজ আমরা করতে পারবো, এবং আমাদের তাই ব্যয় করতে হবে, যা ব্যয় করা দরকার। আমার মনে হয়, আমাদের কোন টাকাপয়সা অপচয় করা উচিত না, কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের কাজটি করা উচিত। এবং তা এই ষাটের দশকের ভিতরেই শেষ হবে। এটা যখন শেষ হবে, আপনাদের মাঝে কেউ কেউ তখনও এই কলেজের স্কুলে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়ে যেতে পারেন। এটা শেষ হবে, যখন এই প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা কেউ কেউ অফিসে কাজ করবেন। কিন্তু এই কাজ শেষ হবে এবং তা শেষ হবে এই দশকের শেষ হওয়ার আগেই।
আমার এই জন্য খুশি লাগছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে চাঁদে পাঠানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ভূমিকার একটি অংশ পালন করছে।
বহুবছর আগে বিখ্যাত ব্রিটিশ পরিব্রাজক জর্জ ম্যালোরিকে (যিনি মাউন্ট এভারেস্টে মারা যান) প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন তিনি মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করতে চাচ্ছেন? তিনি বলেছিলেন, “কারণ এটা সেখানে রয়েছে! ”
হ্যাঁ, মহাকাশ রয়েছে এবং আমরা সেটাতে পরিভ্রমণ করব, এবং চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহ সেখানে রয়েছে, রয়েছে জ্ঞান এবং শান্তির অসীম ভাণ্ডার। তারপর আমরা যখন পাল তুলে দিব, তখন আমরা মানবজাতির সব থেকে ভয়াল, বিপজ্জনক এবং সব থেকে বড় অভিযানের জন্য ঈশ্বরের নিকট অনুগ্রহ চাইব।
ধন্যবাদ।
(সূত্রঃ http://er.jsc.nasa.gov/seh/ricetalk.htm)
[১৯৬২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ তম রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি টেক্সাসের হিউস্টনের রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে এই ভাষণটি দেন। এটি ছিল আমেরিকার চাঁদে মনুষ্য অভিযান এবং সফলভাবে ফিরে আসার জন্য জাতীয় উদ্যোগের প্রতি জনসমর্থন আদায়ের একটি প্রয়াস।– অনুবাদক।]