জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের “দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স”- ভূমিকা

শেষ পর্যন্ত মহাবিশ্বের কী ঘটবে?

অনাদিকাল থেকে কল্পনাবিলাসী মনে একভাবে বা অন্যভাবে অবশ্যই এই প্রশ্নের উদয় হয়েছে। প্রশ্নটা হয়তো ছিলো পৃথিবীর এবং মানবজাতির শেষ পরিণতি কী জানতে চাওয়া। এই ধরণের প্রশ্নে কেউ অন্তত বিশ্বাসযোগ্য উত্তর প্রদানে সক্ষম হওয়ার মতো জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং সৃষ্টিতত্ত্বের (পুরো বিশ্ব সম্পর্কিত অধ্যয়ন) যথেষ্ট উন্নতি অর্জিত হয়েছে শুধুমাত্র গত দুই বা তিন দশকে। এই বইয়ে জ্ঞানের বর্তমান অবস্থার ভিত্তিতে আমি একটি উত্তর প্রদানের চেষ্টা করবো।

মহাবিশ্বের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যতের সম্ভাব্যতা উপলব্ধির জন্য মহাবিশ্বের বর্তমান কাঠামো এবং কীভাবে মহাবিশ্ব এর বর্তমান অবস্থায় এসেছে তা কিছুটা বুঝা দরকার। এটা অধ্যায় ৩-এ কিছুটা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হবে। পাঠককে একটি সামগ্রিক ধারণা (bird’s eye view) দেয়ার জন্য আমি ভূমিকায় এই বইয়ের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করবো। এই সারাংশে উল্লিখিত সব শব্দ ও প্রক্রিয়া পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আরো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হবে।

Figure 1.1
চিত্র ১.১ – Fornax নক্ষত্রপুঞ্জে দেখা যাচ্ছে অনেকগুলো ছায়াপথ, এরা একে অপরের সাথে প্রতিবেশী ছায়াপথের মহাকর্ষের টানে বাঁধা পড়ে আছে। প্রায় ১০^২৭ বছরে এরা সবগুলো একত্র হয়ে আমাদের জানা সবচেয়ে ক্ষুদ্র কৃষ্ণ গহ্বরের চেয়েও ক্ষুদ্র কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হতে পারে।

যখন বৃহৎ মাপের কাঠামো বিবেচনা করা হয়, মহাবিশ্বের মৌলিক উপাদানসমূহকে “শূন্যতার” সাগরের মধ্যে নক্ষত্রের “দ্বীপ” বা ছায়াপথ (চিত্র ১.১) হিসেবে ধরা যেতে পারে; একটি সাধারণ ছায়াপথ হলো প্রায় একশত বিলিয়ন (১০১১) নক্ষত্রের ( উদাহরণস্বরূপ সূর্য) সমাহার যারা পারস্পরিক মহাকর্ষীয় আকর্ষণের মাধ্যমে একত্রে রয়েছে। যে ছায়াপথে আমরা বসবাস করি (সূর্য ও সূর্যের চারপাশের গ্রহ-ব্যবস্থাকে একত্রে সৌরজগৎ বলা হয়) তাকে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা অথবা শুধুমাত্র ছায়াপথ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পর্যবেক্ষণযোগ্য ছায়াপথ এবং অন্যান্য যেসকল ছায়াপথ তাদের সাথে কার্যকারণে সম্পর্কিত তাদের সমষ্টি হিসেবে মহাবিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ছায়াপথগুলো গড়ে একইভাবে সমস্ত মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে – এ বিষয়ে ভালো লক্ষণ রয়েছে।

পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা গেছে যে সব ছায়াপথ একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে; যেন মহাবিশ্ব স্থির নয় বরং গতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ছায়াপথসমূহের একে অপর থেকে এই সরে যাওয়াকে বলা হয় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ (Expansion of the Universe)। ছায়াপথসমূহ যে হারে একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তা থেকে নির্ণয় করা যায় যে সব ছায়াপথ অবশ্যই ১০-২০ বিলিয়ন বছর আগে ঘনিষ্ঠভাবে একসাথে ছিলো। সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে সেসময় একটা বিশ্বজনীন বিস্ফোরণ (Universal Explosion) হয় যেটাতে বস্তুগুলো প্রচণ্ডভাবে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে বস্তুগুলো ঘনীভূত হয়ে বর্তমান সময়ের ছায়াপথের রূপ নেয়। ছায়াপথগুলো একে অপর থেকে দূরে সরে যাওয়া হলো প্রাথমিক বিস্ফোরণ, তথাকথিত ‘মহাবিস্ফোরণ’ (Big Bang)-এর অবশিষ্ট প্রক্রিয়া।

মহাবিশ্বতত্ত্বে (cosmology) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর একটি হলো মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ কি চিরকাল চলতে থাকবে, নাকি ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে যাবে এবং সংকোচন আরম্ভ হবে, যার উত্তর নির্দিষ্টভাবে জানা নেই। মহাবিশ্ব চিরকাল সম্প্রসারিত হবার যে মডেল তাকে বলা হয় ‘উন্মুক্ত’ মহাবিশ্ব (Open Universe), অন্যদিকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ বন্ধ এবং সংকোচন আরম্ভ হবার যে মডেল তাকে বলা হয় ‘বদ্ধ’ মহাবিশ্ব (Closed Universe)। এইভাবে মহাবিশ্বতত্ত্বে একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো – আমরা কি একটি উন্মুক্ত মহাবিশ্বে বাস করি নাকি বদ্ধ মহাবিশ্বে? মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি নির্ভর করছে এই প্রশ্নের উত্তরে। কিছু লক্ষণ আছে যা বলে মহাবিশ্ব উন্মুক্ত, কোনোভাবেই স্থির নয়।

যদি মহাবিশ্ব উন্মুক্ত হয় তবে শেষ পর্যন্ত এর পরিণতি কী হবে? যেহেতু মহাবিশ্বের মৌলিক উপাদান হলো ছায়াপথগুলো, অবশেষে একটি উন্মুক্ত মহাবিশ্বে একটি সাধারণ ছায়াপথের কী ঘটবে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে আমরা উক্ত প্রশ্নটি যাচাই করতে পারি। তাহলে ধরুন একটি আদর্শ ছায়াপথ। এটি প্রধানত নক্ষত্রসমূহকে ধারণ করে। সময়ের সাথে সাথে সব নক্ষত্র বিকিরণ করে এবং অবশেষে মৃত্যু বরণ করে, অর্থাৎ, তারা একটি চরম পর্যায়ে (Final Stage) পৌঁছায় যার পরে সময়ের মাপকাঠিতে কমপক্ষে কয়েক বিলিয়ন বছরে খুব সামান্য বিকিরণ ঘটে। একটি নক্ষত্রের জন্য এরকম তিনটি চরম পর্যায় রয়েছে; তারা হলো শ্বেতবামন (White Dawrf), নিউট্রন তারকা (Neutron Star), এবং কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণবিবর (Black Hole)। এই চরম পর্যায়গুলো অধ্যায় ৬ ও ৭-এ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হবে। এখন এটা উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে যে এই অবস্থায় পদার্থগুলো অত্যন্ত ঘনীভূত থাকে, কৃষ্ণবিবর সবচেয়ে বেশি ঘনীভূত থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে, ছায়াপথের সব নক্ষত্র মরে যাবে, অর্থাৎ, তাদের চূড়ান্ত অবস্থা শ্বেতবামন, নিউট্রন তারকা, বা কৃষ্ণবিবর পর্যায়ে পৌঁছাবে। এই তিন অবস্থায় থাকা নক্ষত্রদের আমরা মৃত নক্ষত্র বলি। এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় হলো একশত ও একহাজার বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী সময় অথবা সম্ভবত তার চেয়েও বেশি। এভাবে, প্রায় একহাজার বিলিয়ন বছরে মৃত নক্ষত্র এবং গ্রহ, গ্রহাণু ও ক্ষুদ্রতর খণ্ডের শীতল আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুর সমন্বয়ে ছায়াপথ গঠিত হবে, তখনো তারা তাদের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের মাধ্যমে একত্রে থাকবে। বিভিন্ন ছায়াপথ অবশ্যই পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে যাতে ছায়াপথগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব গড়ে বর্তমানের চেয়ে দীর্ঘতর হয়ে যায়।

ছায়াপথগুলোতে অনেক দীর্ঘতর সময়ে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হবে, যেখানে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৃত নক্ষত্র অন্য নক্ষত্রের সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে ছায়াপথ থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিলিয়ন বিলিয়ন (১০১৮) অথবা বিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন  (১০২৭) বছরে অথবা তার চেয়ে বেশি সময়ে, ৯৯% মৃত নক্ষত্র এভাবে ছায়াপথ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাকি ১% মৃত নক্ষত্র একটি খুব ঘন মজ্জা (Dense Core) গঠন করে অবশেষে একটি একক কৃষ্ণবিবরে জড়ো হবে যার ভর হবে প্রায় এক বিলিয়ন সৌর ভরের সমান। আমরা তাকে বলতে পারি ‘ছায়াপথীয় কৃষ্ণবিবর’ (Galactic Black hole)। এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত এই প্রক্রিয়াটিকে ছায়াপথের গতিশীল বিবর্তনের পর্যায় হিসেবে অভিহিত করা হবে।

আমি মৃত নক্ষত্রের এই তিনটি চরম পর্যায়কে এমন অবস্থা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছি, যে অবস্থায় সময়ের মাপকাঠিতে বিলিয়ন বছরের দশগুণ সময়ে খুব সামান্য পরবর্তী পরিবর্তন ঘটবে। যখন সময়ের মাপকাঠি  বিলিয়ন বছরের চেয়ে খুব বেশি দীর্ঘতর বিবেচনা করা হয়, তখন এই চরম পর্যায়গুলোর পরিবর্তন হয়। বস্তুত সূর্যের ভরের সমান একটি কৃষ্ণবিবর খুব অল্প পরিমাণ বিকিরণ করে এবং এভাবে ভর হারাতে থাকে। সৌর ভরের সমান একটি কৃষ্ণবিবর এই বিকিরণ প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০৬৫ বছরে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, যা একটি ছায়াপথ একটি একক কৃষ্ণবিবরে পরিণত হতে যে সময় লাগে তার চেয়ে খুব বেশি দীর্ঘতর।  যখন ছায়াপথের গতিশীল বিবর্তন আরম্ভ হয় তখন কৃষ্ণবিবরের এই বিকিরণ গুরত্বপূর্ণ নয়। তবে একবার ছায়াপথীয় কৃষ্ণবিবর গঠিত হওয়ার পর কেউ প্রশ্ন করতে পারেন এটা চিরকাল স্থায়ী হবে নাকি পরবর্তীতে আবার পরিবর্তন হবে। বস্তুত ছায়াপথীয় কৃষ্ণবিবর প্রায় ১০৯০ বছরে সম্পূর্ণভাবে উবে যাবে। একটি অতিছায়াপথীয় কৃষ্ণবিবর (Supergalactic Black Hole), অর্থাৎ, যা গঠিত হয়েছে একটি বৃহৎ ছায়াপথের গুচ্ছ দিয়ে, প্রায় ১০১০০ বছরে পুরোপুরি উবে যাবে। এভাবে ১০১০০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ে সব কৃষ্ণবিবর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং মহাবিশ্বের সকল ছায়াপথ সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তারপর মহাবিশ্বে থাকবে ছায়াপথের গতিশীলতার বিবর্তনের সময় নির্গত হওয়া দলচ্যুত নিউট্রন তারকা ও শ্বেত বামন এবং পদার্থের অন্যান্য ছোট ছোট টুকরো। এই মৃত নক্ষত্রগুলো ও পদার্থের টুকরোগুলো ‘সদা বর্ধমান’ এবং ‘সুবিশাল শূন্যতার’ মধ্যে একলা বিচরণ করবে।

সময়ের মাপকাঠিতে ১০১০০ বছরের তুলনায় দীর্ঘ সময়ে পদার্থের অবশিষ্ট টুকরোগুলোর মধ্যে কিছু ধীর এবং সূক্ষ্ম পরিবর্তন হবে। পদার্থের অবশিষ্ট টুকরোগুলোর শেষ পরিণতি কী হবে? এখানে আমরা পদার্থের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন হই, যার উত্তর জানা নেই। কিছু সম্ভাবনা অধ্যায় ১০ ও ১৪-এ আলোচনা করা হবে। একটি সম্ভাবনা হলো এই যে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে প্রস্তাবিত সূত্রানুসারে শ্বেত বামন ও নিউট্রন তারকাগুলো অনায়াসে কৃষ্ণবিবরে পতিত হবে এবং পরবর্তীতে উবে যাবে। এটা সময়ের মাপকাঠিতে ১০¹º৭৬ বছর! (যদি আমি ‘বিলিয়ন’ শব্দটা এক বিলিয়নবার লিখি, যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তা ১০¹º৭৬ এর তুলনার ক্ষুদ্র হবে।)

উন্মুক্ত মহাবিশ্বে সভ্যতার এবং জীবনের দীর্ঘকালীন টিকে থাকার ব্যাপারে কী হবে? তারা টিকে থাকতে পারে তা ধরে নিয়ে যে সকল পদার্থ জীবন্ত কোষ গঠন করে তারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কিনা তা ভবিষ্যদ্বাণী করা প্রায় অসম্ভব। তবে, সভ্যতার এবং জীবনের টিকে থাকা শক্তির উৎ্সের সহজলভ্যতার উপর নির্ভর করে, এবং কেউ পরেরটি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। অধ্যায় ১১ এ দেখা যাবে যে, অন্তত তাত্ত্বিকভাবে, ১০১০০ বছর বা তার চাইতে বেশি সময়ের জন্য পর্যাপ্ত শক্তির উৎস পাওয়া যাবে। এই সময়ের পরে সভ্যতাকে অনির্দিষ্টভাবে একটা নির্দিষ্ট সীমিত পরিমাণ শক্তিতে টিকে থাকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এটি একটি অমীমাংসীত প্রশ্ন, কিন্তু কিছু সম্ভাব্যতা অধ্যায় ১১ এ বিবেচনা করা হবে।

উপরে উপস্থাপিত চিত্রটিতে মহাবিশ্ব উন্মুক্ত হলে কেমন হতো তা দেখায়। মহাবিশ্ব বদ্ধ হলে কী হতো? ধরুন মহাবিশ্ব এমনভাবে বদ্ধ হতে আরম্ভ করলো যে, যখন এটি এর সর্বোচ্চ সম্প্রসারণে পৌছালো, তখন আন্তঃছায়াপথীয় দূরত্ব (Intergalactic Distance) হলো গড়ে বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। তারপর এই সর্বোচ্চ সম্প্রসারণ প্রায় ৪০ বা ৫০ বিলিয়ন বছরে পৌঁছাবে। এই সর্বোচ্চ সম্প্রসারণে পৌঁছনোর পর প্রায় এমন হবে, যেন মহাবিশ্বের একটি চলমান পর্দাকে সর্বাধিক সম্প্রসারণে নেওয়া হলো এবং তারপর পিছন দিকে টান দেওয়া হলো। প্রায় ৯০-১১০ বিলিয়ন বছর পর মহাবিশ্ব খুব ঘন এবং গরম হবে এবং অতঃপর শীঘ্রই তথাকথিত ‘মহা সংকোচন’ ( ‘big crunch’ ) সংঘটিত হবে, যেখানে সব পদার্থকে একটি অগ্নিসদৃশ গোলক (Fiery Implosion) গ্রাস করে নেবে। এই ক্ষেত্রে জীবনের কোনো অস্তিত্ব টিকে থাকার খুব সামান্য সুযোগ রয়েছে। মহা সংকোচনের পরে আর কী হবে, অথবা এরপর আর কোনো ‘পর’ থাকবে কিনা তা জানা নেই।

আমার এ ব্যাপারে জোর দিয়ে বলা উচিত যে এই গ্রন্থে উপস্থাপিত ছবিগুলো জ্ঞানের বর্তমান অবস্থার ভিত্তিতে অঙ্কিত। এমনকি এই অনুবিধি (proviso)  আরো মানসম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। আদর্শ মডেল হিসেবে পরিচিত এই মহাবিশ্বের একটি মডেল এই বইয়ের ভিত্তি, যা অধ্যায় ৩-এ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হবে। আমি মনে করি এটা বলা ঠিক যে একদল উল্লেখযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মহাবিশ্ববিদ বিশ্বাস করেন যে আদর্শ মডেলটি এর প্রয়োজনীয়তার খাতিরে সঠিক। যাইহোক, কিছু সংখ্যালঘু মহাবিশ্ববিদ রয়েছেন যারা একজনের ধারণা অথবা অন্যান্য কিছু অনাদর্শ মডেল নিয়ে পড়ে আছেন। একটি ব্যতিক্রম (অবিচল অবস্থা তত্ত্ব বা the steady state theory যা অধ্যায়  ১৩-এ  সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে) ছাড়া এই বইয়ে আমরা অনাদর্শ মডেলগুলোর ব্যাপারে কিছু বলবো না। পাঠক আরো লক্ষ্য করবেন যে এই বইয়ে স্পষ্টভাবে প্রধান ভূমিকা রাখছে কৃষ্ণবিবর। যদিও কৃষ্ণবিবরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের জন্য শক্তিশালী তত্ত্বীয় এবং কিছু পর্যবেক্ষণমূলক কারণ আছে তথাপি একটি কৃষ্ণবিবরও এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। কিছু শ্রদ্ধেয় বৈজ্ঞানিক থাকতে পারেন যারা কৃষ্ণবিবরে বিশ্বাস করেন না, কিন্তু দেখা যাবে যে মহাকর্ষীয় তত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের বেশিরভাগই ‘কৃষ্ণবিবর অবশ্যই আছে’ এই দৃষ্টিভঙ্গিতে নাম লিখিয়েছেন। এই বইয়ে আমরা ধরে নেবো যে কৃষ্ণবিবর রয়েছে।

প্রোটন সব পদার্থের একটি উপাদান এবং এটি একটি দীর্ঘ জীবন-কালে অস্থায়ী, সম্প্রতি কিছু পদার্থবিদ দ্বারা পেশকৃত এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করলে উপরে উপস্থাপিত উন্মুক্ত মহাবিশ্বের ছবিটি কিছুটা পরিবর্তিত হবে। অর্থাৎ কয়েকটি কারণবশত কিছু পদার্থবিদ অনুমান করেন যে সব প্রোটন শেষ পর্যন্ত ক্ষয় হয়ে যাবে। অধ্যায় ১৪-এ  এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হবে। মহাবিশ্বের সুদূর ভবিষ্যতে এই সম্ভাবনাটির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে এবং আমরা অধ্যায় ১৪-এ এ  বিষয়ে আলোচনা করব।

মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি সম্পর্কে কেন কারো মাথা ঘামানো উচিৎ? এই প্রশ্নের উত্তর এভারেস্ট পর্বত আরোহণ সম্পর্কে করা প্রশ্নের উত্তরের মতো: কারণ সমস্যা বিদ্যমান।

মানব মনের প্রকৃতিই হলো অহর্নিশ জ্ঞানের  নতুন সীমানা আবিষ্কার করার উদ্দেশ্যে খোঁজা। মহাবিশ্ব ও সভ্যতার শেষ পরিণতি একটি মজার সমস্যা, অবশ্যই একটি মজার সমস্যা, যেহেতু আমরা এই বইয়ে দেখব, এটা পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, জীববিজ্ঞান এবং জ্ঞানের অন্যান্য শাখার মৌলিক প্রশ্ন, যার উত্তরগুলো এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নিয়ে আসবে, যদি মিলে যায়। (চলবে…)

1 thought on “জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের “দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স”- ভূমিকা

  1. আসলে আপনাদের দ্বারা বিজ্ঞানের বই যথেষ্ট আকারেও হার্ডকপি হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছেনা। যাইহোক
    ‘দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স’ বইটি কি হার্ডকপি রূপে প্রকাশিত হয়েছে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।,,,,,,,,,,,ধন্যবাদ

প্রত্যুত্তর দিন H.M Awlad প্রতিউত্তর নাকচ করে দিন

আপনার ইমেইল প্রকাশিত হবে না। Required fields are marked *