নোয়াম চমস্কি নব্বইয়ে পদার্পণ করতে চলেছেন, তবে তাঁর প্রকাশনার সংখ্যাও সেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বামপন্থার জন্য এটি সৌভাগ্যের বিষয় যে, তিনি এখনো সাক্ষাতকার দেওয়া চালু রেখেছেন।
গত ডিসেম্বরে তিনি তাঁর আটাশিতম জন্মবার্ষিকীর কয়েক দিন আগে ম্যাসাচুসেটসের ক্যামব্রিজের কার্যালয়ে বসে আলাপ করেছেন। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ভাইওস ত্রিয়ান্তাফিল্লোও। চমস্কি সমাজতন্ত্র, মানুষের প্রবৃত্তি, এবং অ্যাডাম স্মিথ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
উৎপাদনের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে মানবিক করে তোলার জন্য সংস্কার (বার্নি স্যান্ডার্সের প্রস্তাব অনুযায়ী) এবং পুঁজিবাদকে পুরোপুরিভাবে উৎখাত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্যের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে সমাজতন্ত্রীদের কীভাবে চিন্তা করা উচিত?
নোয়াম চমস্কিঃ আচ্ছা, প্রথমে আমাদের এটি স্বীকার করা উচিত যে, রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার অধিকাংশ পরিভাষার মতো সমাজতন্ত্রও কম-বেশি এর তাৎপর্য হারিয়েছে। সমাজতন্ত্র বলতে কিছু একটা বুঝাতো। যদি আপনি অনেক পেছনে যান তাহলে এটা মূলত উৎপাদক কর্তৃক উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ, মজুরি শ্রমের বিলোপ, জীবনের সকল পরিমণ্ডলে গণতন্ত্রীকরণ; কারখানায় শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন, বাণিজ্য, শিক্ষা, মিডিয়া, সম্প্রদায় কর্তৃক সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণ এবং আরো অনেক কিছু বুঝাতো। এক সময় এটিই ছিলো সমাজতন্ত্র।
তবে একশো বছর যাবত সমাজতন্ত্র বলতে এমনটা বুঝায় না। আসলে যেসব দেশকে সমাজতান্ত্রিক দেশ বলা হতো সেগুলোই ছিলো বিশ্বের সর্বাধিক সমাজতন্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থা। রাশিয়ার শ্রমিকদের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের শ্রমিকদের অধিকার বেশি ছিলো, এবং তারপরও এটাকে একরকমভাবে সমাজতন্ত্র বলা হতো।
বার্নি স্যান্ডার্সের ব্যাপারে যতটুকু জানা যায় তা হলো তিনি একজন ভদ্র ও সৎ মানুষ, এবং আমি তাঁকে সমর্থন করেছি। সমাজতন্ত্র বলতে তিনি যা বুঝিয়েছেন সেটা হলো নিউ ডিল** উদারনীতিবাদ। আসলে তাঁর নীতিমালাসমূহ জেনারেল আইজেনহাওয়ারের চেয়ে খুব একটা ভিন্ন কিছু হতো না। এটাকে একটা রাজনৈতিক বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করার অর্থ হলো এই যে, নব্য-উদারনৈতিক কার্যক্রমগুলো প্রবর্তিত হওয়ার সময় থেকে, প্রধানত বিগত ত্রিশ বছরে রাজনীতির পাল্লা কতটুকু ডানপন্থার দিকে ঝুঁকেছে। তিনি নিউ ডিল উদারনীতিবাদের মতো কিছু একটা পুনঃস্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটা একটা খুব ভালো জিনিস।
এখন আমি মনে করি, আপনার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিতঃ যেসব লোকেরা মানুষ এবং তাঁদের জীবন ও উদ্বেগের ব্যাপারে মাথা ঘামায়, তাঁদের কি আপনার কথা অনুযায়ী উৎপাদনের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে মানবিক করার সন্ধান করা উচিত? আর এর উত্তর হচ্ছে, তাদের অবশ্যই তা করা উচিত, এটাই মানুষের জন্য উত্তম।
পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণভাবে উৎখাত করার জন্য তাদের কি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত? অবশ্যই, আমি তাই মনে করি। পুঁজিবাদী অর্থনীতির নিজস্ব কৃতিত্ব আছে, তবে এই কৃতিত্বের মূলে আছে পুরোপুরি নির্মম জবরদখল, মনুষ্য-বিরোধী জবরদখল। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষ তাঁদের সম্পদের মালিকানার বলে আদেশ দেবে এবং অপর বৃহৎ শ্রেণীটি সম্পদ এবং ক্ষমতায় তাঁদের প্রবেশের ঘাটতির কারণে সেই আদেশ নিয়ে তা পালন করবে, এই ধারণাটি গ্রহণযোগ্য নয়।
সুতরাং এটা অবশ্যই বিলুপ্ত হওয়া দরকার। তবে সেগুলো এটার বিকল্প নয়। সেগুলো পুরোপুরিভাবে আপনাকে করতে হবে।
সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে তাঁর ব্যবহৃত অন্যতম যুক্তি হচ্ছে যে, মানুষ স্বভাবগতভাবে স্বার্থপর ও প্রতিযোগিতামূলক, সে কেবলই পুঁজিবাদের অনুগ্রাহী। আপনি এর উত্তরে কী বলবেন?
নোয়াম চমস্কিঃ স্মরণে রাখুন যে, পুঁজিবাদ মানব সমাজের একটি ক্ষুদ্র সময় জুড়ে আছে। আমরা সত্যিকার অর্থে কখনো পুঁজিবাদে ছিলাম না, আমরা সবসময়ই রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের এক বা অন্যান্য প্রকারে ছিলাম। এর কারণ হলো পুঁজিবাদ যেকোনো সময় নিজেকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। ফলে বাজারের প্রভাবসমূহের ধ্বংসাত্মক ফলাফল থেকে সমাজকে রক্ষা করার জন্য ব্যবসায়ী শ্রেণী সবসময় রাষ্ট্রের দৃঢ় হস্তক্ষেপ চেয়ে এসেছে। প্রায়শই এটা হলো ব্যবসা যেটা নেতৃস্থানীয় অবস্থানে থাকে, কারণ তাঁরা সবকিছুকে ধ্বংস করতে চায় না।
সুতরাং মানব ইতিহাসের একদম সংক্ষিপ্ত সময় জুড়ে আমাদের এক বা অন্যান্য ধরনের রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ ছিলো। আর এটা মূলত মানুষের প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের কোনো ধারণা দেয় না। যদি মানুষের সমাজ এবং মানুষের মিথষ্ক্রিয়ার দিকে তাকান তাহলে যেকোনো কিছু খুঁজে পাবেন। আপনি স্বার্থপরতা খুঁজে পাবেন, আপনি পরার্থপরতা খুঁজে পাবেন, আপনি সহমর্মিতা খুঁজে পাবেন।
পুঁজিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তিত্ব অ্যাডাম স্মিথের কথাই ধরুন— তিনি কী ভেবেছিলেন? তিনি ভেবেছিলেন মানুষের প্রধান প্রবৃত্তি হলো সহমর্মিতা। বস্তুত, “অদৃশ্য হাত” শব্দটির দিকে খেয়াল করুন। তিনি এই বাক্যাংশের মাধ্যমে আসলে যা বুঝিয়েছেন সেটার দিকে খেয়াল করুন। প্রকৃতপক্ষে এটা খুঁজে বের করা কঠিন কিছু নয়, কারণ তিনি তাঁর প্রধান দু’টি বইয়ের প্রত্যেকটিতে এক বার করে কেবল দুই বার প্রাসঙ্গিক অর্থে এটি ব্যবহার করেছেন।
তাঁর একটি প্রধান বই দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস-এ এই বাক্যাংশটি একবার দেখা গেছে, এবং নব্য-উদারনৈতিক বিশ্বায়নের একটি সমালোচনায় রূপ নেওয়ার সময় এটি আবির্ভূত হয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন, ইংল্যান্ডের বেলায় যদি প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীরা বিদেশে বিনিয়োগ করতো এবং বিদেশ থেকে আমদানি করতো তাহলে তাঁরা লাভবান হতো, কিন্তু এতে ইংল্যান্ডের ক্ষতি হতো। তবে নিজ দেশের প্রতি তাঁদের অঙ্গীকার ছিলো যথেষ্ট। তাই তাঁদের দ্বারা এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিলো এবং ফলশ্রুতিতে একটি অদৃশ্য হাতের কারসাজিতে ইংল্যান্ড সেই প্রভাব থেকে মুক্তি পেয়েছিলো যাকে আমরা নব্য-উদারনৈতিক বিশ্বায়ন বলে থাকি। এই হলো এর একটি ব্যবহার।
অন্য ব্যবহারটি দেখা গেছে তাঁর আরেকটি প্রধান বই দ্য থিওরি অফ মরাল সেন্টিমেন্টস-এ (যেটা মানুষ খুব একটা পড়ে না, কিন্তু তাঁর কাছে এটি একটি প্রধান বই)। এখানে তিনি একজন সাম্যবাদী, তিনি সুযোগের সমতায় নয় বরং ফলাফলের সমতায় বিশ্বাস করতেন। তিনি একজন প্রাক-পুঁজিবাদী এনলাইটেনমেন্ট ব্যক্তিত্ব।
তিনি বলেছেন, মনে করুন, ইংল্যান্ডে একজন ভূস্বামী অধিকাংশ ভূমি দখল করেছেন এবং অন্যান্য মানুষের বসবাস করার জন্য কিছু নেই। তিনি বলেছেন, এটা তেমন কোনো ব্যাপার নয় কারণ ভূস্বামীটি অন্য মানুষের প্রতি তাঁর সহমর্মিতার দরুণ তাঁদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করবে। এর ফলে অদৃশ্য হাতের বদৌলতে আমরা একটি মোটামুটি সাম্যবাদী সমাজ লাভ করবো। এটিই মানুষের স্বভাব সম্বন্ধে তাঁর ধারণা।
আপনি যাদের সাথে কোর্স নেন কিংবা যাদের বই পড়েন তাঁরা “অদৃশ্য হাত” শব্দটিকে এই অর্থে ব্যবহার করেন না। মানুষের স্বভাব নিয়ে এখানে মতবাদের একটি পার্থক্য দেখা যায়। আমরা মানুষের স্বভাব সম্বন্ধে আসলে যেটা জানি তা হলো এটার সবগুলো সম্ভাবনাই আছে।
অধিকাংশ মানুষের কাছে আবেদন রাখতে সক্ষম এমন একটি দৃঢ় বিকল্প তৈরি করার মাধ্যমে একটি ভবিষ্যৎ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য প্রস্তাবনা পরিকল্পনা করার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে আপনি কী মনে করেন?
নোয়াম চমস্কিঃ আমি মনে করি মানুষ নির্ভরযোগ্য দীর্ঘমেয়াদী সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যসমূহের ব্যাপারে আগ্রহী (যেগুলোকে সাধারণভাবে সমাজতন্ত্র বলা যায় না)। আকাঙ্ক্ষিত সমাজটির কীভাবে কাজ করা উচিত তার মধ্য দিয়ে তাঁদের যত্নসহকারে ভাবা উচিত, বিস্তৃত ক্ষুদ্রাংশ দিয়ে নয়। কারণ পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রচুর জিনিস জানতে হবে, এবং যেকোনো উপায়ে বিশদভাবে সমাজ পরিকল্পনা করার বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান নেই। তবে সাধারণ নির্দেশনা তৈরি করা যেতে পারে, অনেক নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
আর এটি মানুষের জনপ্রিয় চেতনার অংশ হিসেবে থাকা উচিত। এর মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের দিকে স্থানান্তর সংঘটিত হতে পারে। যখন এটি একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর সচেতনতা, চৈতন্য এবং আকাঙ্ক্ষার অংশে পরিণত হয়।
তাহলে এই অভিমুখে অন্যতম মুখ্য অর্জন, সম্ভবত একটি মুখ্য দৃষ্টান্তের কথা ধরা যায়। সেটা হলো ১৯৩৬ সালে স্পেনের নৈরাজ্যবাদী বিপ্লব। এই বিপ্লবের জন্য শিক্ষায়, সক্রিয়তায় এবং প্রচেষ্টায় দশকের পর দশক জুড়ে প্রস্তুতি অব্যাহত ছিলো। মাঝেমধ্যে এগুলো প্রত্যাহত হয়েছিলো কিন্তু তাঁরা যেভাবে সমাজকে পুনর্গঠন করতে চেয়েছিলো সেটা ফ্যাসিবাদী আক্রমণের মুহুর্তে তাঁদের মনের গহীনে ছিলো।
এটি অন্যান্য উপায়েও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের পুনর্নির্মাণের কথাই ধরুন। ইউরোপ অঞ্চল জুড়ে সত্যিকার অর্থে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব বজায় ছিলো। তবে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদী গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ করতে তাঁদের সত্যি বেশি সময় লাগেনি কারণ এটি লোকজনের মাথায় ছিলো।
বিশ্বের অন্য অনেক জায়গাও প্রায় কাছাকাছি বিধ্বস্ত ছিলো এবং তাঁরা কিছুই করতে পারেনি। তাঁদের মনে বোধশক্তি ছিলো না। মানুষের চৈতন্যই এখানে বড় বিষয়।
সমাজতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারের দাবি নিয়ে সিরিযা ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে সহযোগিতা করলো এবং ব্যয় সংকোচন প্রণয়নে বাধ্য হওয়ার পরও ক্ষমতা ত্যাগ করলো না। ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে অনুরূপ পরিণতি এড়াতে পারবো বলে আপনি মনে করেন?
নোয়াম চমস্কিঃ আমি মনে করি গ্রীসের আসল ট্র্যাজেডি হলো গ্রীসের এই সংকটটি এড়িয়ে যাওয়া যেতো। ইউরোপীয় আমলাতন্ত্র, ব্রাসেলসের আমলাতন্ত্র এবং নর্দার্ন ব্যাংকের নির্দয়তার কথা, যেটা আসলেই নির্দয় ছিলো, সেটি বাদ দিয়ে ধরলেও এটি সত্য। একদম শুরু থেকেই খুব সহজে ব্যাপারটি সামলে নেওয়া যেতো।
তবে এটি ঘটেছিলো, আর সিরিযা এর সাথে লড়াই করার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলো। কার্যত তারা সত্যি সত্যি একটি গণভোটের ডাক দিয়েছিলো যেটা ইউরোপকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো। জনগণের ভাগ্য তাঁদের নিজেদের নির্ধারণ করতে দেওয়া উচিত— গণতন্ত্রকে কীভাবে অনুমোদন দেওয়া যায় (যে দেশে এটি সৃষ্টি হয়েছিলো সেখানেও) এমন ধারণা ইউরোপের এলিটদের কাছে স্রেফ অপছন্দনীয়।
জনগণ যা চায় সেটা তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করার অপরাধে গ্রীসকে আরো শাস্তি দেওয়া হয়েছিলো। গণভোটের কারণে ত্রইকা’র চাহিদাগুলো আরো কঠোর হয়ে গিয়েছিলো। তাঁরা এক ধরনের ডমিনো ইফেক্টের ভয় পেয়েছিলো— যদি আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষার দিকে মনোনিবেশ করি, অন্যরাও তখন একই ধারণা লাভ করবে, আর গণতন্ত্রের মহামারী তখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে, তাই আমাদের এটি সমূলে ধ্বংস করতে হবে।
তারপর সিরিযা নতি স্বীকার করেছিলো, আর তারপর থেকে তাঁরা যেগুলো করেছে সেগুলো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
আপনি প্রশ্ন করছেন কীভাবে মানুষের সাড়া দেওয়া উচিত? এটি করা যেতে পারে কিছু জিনিস আরো ভালো করার মাধ্যমে। এটা সহজ নয়, বিশেষ করে যখন তারা বিচ্ছিন্ন। গ্রীস একাই খুব নাজুক অবস্থায় আছে। গ্রীকরা যদি ইউরোপের অন্যত্র প্রগতিশীল বামপন্থী ও জনপ্রিয় শক্তির সমর্থন পেতো, তাহলে তারা হয়ত ত্রইকা’র দাবিগুলো প্রতিরোধ করতে সক্ষম হতো।
বিপ্লবের পর ফিদেল ক্যাস্ট্রো কিউবায় যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন সেটা নিয়ে আপনার অভিমত কী?
নোয়াম চমস্কিঃ আচ্ছা, ক্যাস্ট্রোর আসল লক্ষ্য কী ছিলো তা আমরা জানি না। তিনি শুরু থেকে আধিপত্যবাদী পরাশক্তির রূঢ় ও নির্মম আক্রমণের দ্বারা তীব্রভাবে অপ্রতিভ ছিলেন।
আমাদের স্মরণ করতে হবে যে, তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে সত্যি সত্যি ফ্লোরিডা থেকে বিমানগুলো কিউবায় বোমা নিক্ষেপ করতে শুরু করেছিলো। এক বছরের মধ্যে আইজেনহাওয়ার প্রশাসন গোপনে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ঠিক করলো যে, [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র] কিউবার সরকারকে উৎখাত করবে। তারপর এলো বে অফ পিগস আক্রমণ। কেনেডি প্রশাসন এই আক্রমণের ব্যর্থতা নিয়ে চরম ক্ষেপে গিয়েছিলো এবং তাৎক্ষণিকভাবে একটি গুরুতর সন্ত্রাসবাদী যুদ্ধ, অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছিলো, যেটা পরবর্তী বছরগুলোতে আরো কঠোর রূপ ধারণ করেছিলো।
এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এটা অনেকটা বিস্ময়কর মনে হয় যে, কিউবা টিকে গিয়েছিলো। কিউবা একটি বৃহৎ পরাশক্তির উপকূলের অদূরে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই পরাশক্তি দেশটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর কিউবা স্পষ্টত তার সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রায় পুরো সময় জুড়ে টিকে থাকার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল ছিলো। তবে তারা এক রকমভাবে টিকে গেছে। এটা সত্য যে দেশটিতে একনায়কত্ব ছিলোঃ প্রচুর নিষ্ঠুরতা, প্রচুর রাজনৈতিক বন্দী, প্রচুর মানুষের হত্যা।
মনে রাখুন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিউবা আক্রমণকে আদর্শগতভাবে প্রয়োজনীয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিলো। রাশিয়া দৃশ্যপট থেকে সরে যাওয়ার সাথে সাথে আক্রমণ আরো কঠোর হয়ে গিয়েছিলো। এই বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি, কিন্তু এটা আপনাকে বলে দেয় যে পূর্ববর্তী দাবিগুলো স্রেফ মিথ্যা, অবশ্যই এগুলো মিথ্যা ছিলো।
আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নথিগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন যে সেগুলোতে পরিষ্কারভাবে কিউবাকে ঝুঁকি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ষাটের দশকের প্রথমভাগে স্টেট ডিপার্টমেন্ট কিউবার হুমকিকে মার্কিন নীতির সফল বিরোধিতা হিসেবে অভিহিত করেছিলো, যেটাকে মনরো ডকট্রিন বলা হয়। মনরো ডকট্রিনে পশ্চিম গোলার্ধে আধিপত্য বজায় রাখার দাবি প্রতিষ্ঠা করেছিলো এবং ক্যাস্ট্রো সেটা সফলভাবে অগ্রাহ্য করছিলেন। তাঁরা সে সময় মনরো ডকট্রিন বাস্তবায়ন করতে পারেননি কিন্তু দাবিটি বাস্তবায়ন করেছিলেন।
এটা সহ্য করা যায় না। এর মানে হলো কেউ বললো, চলো গ্রীসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি, আর আমরা এটা একদমই সহ্য করতে পারলাম না, তাই আমাদের সেই হুমকিটি সমূলে ধ্বংস করতে হবে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে গোলার্ধের প্রভুকে কেউ সফলভাবে অগ্রাহ্য করতে পারে না, তাই তাঁর নির্দয়তাকেও এড়িয়ে যেতে পারে না।
তবে এই প্রতিক্রিয়ায় অবিমিশ্রতা আছে। স্বাস্থ্য, সাক্ষরতা এবং আরো অনেক ক্ষেত্রে অর্জন আছে। আন্তর্জাতিকতাবাদ ছিলো অসাধারণ। নেলসন ম্যান্ডেলা কেন কারাগার থেকে মুক্ত হবার পরপরই কিউবায় গিয়ে ক্যাস্ট্রোর প্রশংসা করেছেন এবং কিউবার জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার একটি কারণ আছে। এটি তৃতীয় বিশ্বের একটি প্রতিক্রিয়া, আর তাঁরা এটি বুঝতে পেরেছিলো।
আফ্রিকার স্বাধীনতা এবং বর্ণবাদের উৎখাতে কিউবা একটি বিশাল ভূমিকা পালন করেছিলো—তারা পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোতে, হাইতি ও পাকিস্তানে ভূমিকম্পের পর, প্রায় সর্বত্র চিকিৎসক ও শিক্ষক পাঠিয়েছে। এই আন্তর্জাতিকতাবাদ সত্যি বিস্ময়কর। আমারে মনে হয় না পৃথিবীতে এরকম আর কিছু হয়েছে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অর্জনগুলো ছিলো বিস্ময়কর। স্বাস্থ্য খাতে পরিসংখ্যানগুলো অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো, আর সেই সাথে দুই দেশের সম্পদ ও ক্ষমতার পার্থক্যের দিকে নজর দিন।
অন্য দিকে কঠোর একনায়কত্ব ছিলো। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে দুটো দিকই ছিলো।
সমাজতন্ত্রের পথে যাত্রা? আমরা এই বিষয়ে কিছু বলতেও পারি না। পরিস্থিতি এটাকে অসম্ভব করে তুলেছিলো, আর সেরকম কোনো উদ্দেশ্য আদৌ ছিলো কিনা তাও বলতে পারি না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান কাঠামোর সমালোচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি আন্দোলন উদ্ভূত হয়েছে? তথাপি এই আন্দোলনগুলো একটি সাধারণ দর্শনে একতাবদ্ধ হওয়ার বদলে একটি সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়েছে। সামাজিক আন্দোলনগুলোর অবস্থা নিয়ে এবং এগুলোর দলবদ্ধ করার ক্ষমতা নিয়ে আমাদের কীভাবে ভাবা উচিত?
নোয়াম চমস্কিঃ অকুপাই আন্দোলনের কথা বলা যাক। অকুপাই কোনো আন্দোলন ছিলো না, এটি ছিলো একটি কৌশল। আপনি ওয়াল স্ট্রিটের নিকটবর্তী একটি পার্কে সারাজীবন বসে থাকতে পারবেন না। আপনি কয়েক মাসের বেশি এটি করতে পারবেন না।
এটি একটি কৌশল যা আমি ধারণা করতে পারিনি। যদি লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করতো, আমি বলতাম, এটা করো না।
এটি ছিলো একটি বড় সাফল্য, বিরাট সাফল্য। এটি মানুষের চিন্তায়, মানুষের কাজে একটি বিশাল প্রভাব ফেলেছে। সম্পদের কেন্দ্রীকরণের ধারণা সম্পূর্ণ ধারণা (১ শতাংশ ও ৯৯ শতাংশ) মানুষের উপলব্ধির পটভূমিতে ছিলো, অবশ্যই এটি সেখানে ছিলো। তবে এটি বিখ্যাত হয়েছে— এমনকি গণমাধ্যমেও প্রচার পেয়েছে (উদাহরণ হিসেবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর কথা বলা যায়)— আর এটি অনেক ধরনের এক্টিভিজমের দিকে অগ্রসর হয়েছে, মানুষকে সক্রিয় করেছে এবং আরো অনেক কিছু করেছে। তবে এটি কোনো আন্দোলন ছিলো না।
সাধারণ অর্থে বামপন্থীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে গেছে। আমরা খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের সমাজে বাস করি। মানুষ অনেক একাকীঃ এখানে আপনি এবং আপনার আইপ্যাড-ই সবকিছু।
প্রধান সংগঠনকারী কেন্দ্রগুলো, যেমন শ্রমিক আন্দোলন, গুরুতরভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নীতিমালার মাধ্যমে এগুলো খুব গুরুতরভাবে দুর্বল করা হয়েছে। এটি তুফানের মতো ঘটেনি। শ্রমজীবী শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবদমিত করার জন্য নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। আর ইউনিয়নগুলো শ্রমিকদের অধিকারের জন্য কাজ করে বলে নয়, বরং সেগুলোর গণতান্ত্রিক প্রভাবের কারণে সেটা করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাহীন মানুষ একতাবদ্ধ হতে পারে, একে অপরকে সহায়তা করতে পারে, বিশ্ব সম্বন্ধে জানতে পারে, তাদের ধারণাগুলো পরীক্ষা করতে পারে, কার্যক্রম আরম্ভ করতে পারে— আর এটি ভয়ংকর। এটি গ্রীসের গণভোটের মতো। এটা হতে দেওয়া ভয়ংকর ব্যাপার।
আমাদের স্মরণ করা উচিত যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মহামন্দার সময় সারা বিশ্বে জনপ্রিয়, মূলগত গণতন্ত্রের পক্ষে একটি জোয়ার ছিলো। এটি বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছিলো, তবে এটি সর্বত্র বিরাজমান ছিলো।
গ্রীসে এটি ছিলো গ্রীক বিপ্লব। আর এটাকে দমন করা হয়েছিলো। গ্রীসের মতো দেশগুলোতে সহিংসতার মাধ্যমে এটি দমন করা হয়েছিলো। ইতালির মতো দেশগুলোতে, যেখানে ১৯৪৩ সালে মার্কিন/ব্রিটিশ বাহিনী প্রবেশ করেছিলো সেখানে জার্মান-বিরোধী গুপ্তবাহিনীকে আক্রমণ ও ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে এবং প্রথাগত ব্যবস্থাকে পুনর্বহাল করার মাধ্যমে এটি দমন করা হয়েছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে এটাকে সহিংসতার মাধ্যমে দমন করা হয়নি— পুঁজিবাদী শক্তির সেই সক্ষমতা এখানে নেই— তবে ’৪০ এর দশকের শেষ দিকে শ্রমিক আন্দোলনকে অবদমিত ও ধ্বংস করার জন্য বিপুল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। তারপর এটি আরো চলেছিলো।
রিগ্যানের অধীনে এটি শাণিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিলো, ক্লিনটনের অধীনে পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছিলো এবং এখন শ্রমিক আন্দোলন প্রচণ্ডভাবে দুর্বল (অন্যান্য দেশে এটি ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছে) হয়ে গেছে। তবে এটি একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষ সমবেতভাবে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে কাজ করার জন্য একত্র হতে পারতো, আর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মোটামুটি একইভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে আমরা কী প্রত্যাশা করতে পারি? তাঁর উত্থানের ফলে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সাধারণ দর্শনকে ঘিরে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত এবং ঐক্যবদ্ধ করার ভিত্তি গড়ে উঠবে?
নোয়াম চমস্কিঃ এটার উত্তর আসলে আপনি এবং আপনার বন্ধুদের উপর নির্ভর করছে। এটা সত্যিকার অর্থে নির্ভর করে জনগণ, বিশেষত তরুণরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় তার উপর। অনেক সুযোগ আছে এবং এগুলো নেওয়া যেতে পারে। এগুলো কোনোভাবেই অবধারিত নয়।
কী হতে পারে সেটার দিকে খেয়াল করুন। ট্রাম্প সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই বলা যায় না। তিনি যা পরিকল্পনা করেন তা জানেন না। তবে যেটা ঘটতে পারে, ধরুন, একটি সম্ভাব্য ঘটনা হতে পারে এই রকমঃ যে বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে তারা ২০০৮ সালে বারাক ওবামাকে ভোট দিয়েছে। তারা “আশা” ও “পরিবর্তন” এর স্লোগানে প্রলুব্ধ হয়েছিলো। তাদের আশা পূরণ হয়নি, তারা পরিবর্তন লাভ করেনি, তারা মোহমুক্ত হয়েছিলো।
এবার তারা আরেকজন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন যিনি প্রত্যাশা ও পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছেন এবং সব ধরনের আশ্চর্যজনক কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তিনি সেগুলো করবেন না। তাহলে তিনি যখন সেগুলো করবেন না এবং ওই নির্বাচকমণ্ডলী যখন মোহমুক্ত হয়ে যাবে তখন কয়েক বছরের মধ্যে কী ঘটবে?
এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতা ব্যবস্থা সাধারণভাবে যেটা করবে সেটা হওয়ার সম্ভাবনাই খুব বেশিঃ যারা বেশি নাজুক তাদেরকে বলির পাঁঠা বানিয়ে বলা হবে, “হ্যাঁ, আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা তোমরা পাওনি, আর এর কারণ হলো মেক্সিকান, কৃষ্ণাঙ্গ, সিরিয়ান অভিবাসী, ওয়েলফেয়ার ভক্ষণকারী, ওইসব অযোগ্য লোকগুলো। তাঁরাই সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। চলো তাদের ধাওয়া দেই। সমকামীরাও নিন্দনীয়।”
এটাই হতে পারে। ইতিহাসে এটাই জঘন্য পরিণতির জন্ম দিয়ে বারবার সংঘটিত হয়েছে। আর এটা সফল হবে কিনা সেটা নির্ভর করে আপনার মতো লোকেরা কী ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলবে তার উপর। এই প্রশ্নের উত্তর আপনার দিকে নির্দেশ করা উচিত, আমার দিকে নয়।
(সমাপ্ত)
** ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের শাসনামলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তাসহ অনেকগুলো কার্যক্রম চালু করা হয়েছিলো। ‘নিউ ডিল’ নামে অভিহিত এই কার্যক্রমের অধীনে মার্কিন কংগ্রেসে কয়েকটি আইন পাশ করা হয়েছিলো। এছাড়া প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট তাঁর নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগের মাধ্যমে আরো কিছু আইন প্রণয়ন করেছিলেন। ১৯৩০ এর দশকে মহামন্দার সময়ে বেকার ও দরিদ্রদের সহায়তা প্রদান, অর্থনীতির স্বাভাবিক পুনরুদ্ধার এবং পুনরায় মন্দা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্দেশ্যে ‘নিউ ডিল’ নামক কার্যক্রমটি গৃহীত হয়েছিলো।