কর্মশালা ০১ || কর্মশালা ০২ || কর্মশালা ০৩ || কর্মশালা ০৪
কর্মশালা ০৫
আমরা প্রধানত গ্রুপ করে অনুবাদের কাজ করি। কাজগুলো ভাগাভাগি করে দেয়া হয়, প্রত্যেকে কাজ জমা দেয়, এবং এরপর একজন সমন্বয়ক বা সম্পাদক সেটা সম্পাদনা করেন। আর সম্পাদনা করতে গিয়ে প্রচুর মানুষের লেখা পড়তে হয় আমাদেরকে। অধিকাংশ মানুষই কিছু কিছু ব্যাপার ভুল করেন। সেগুলো যাতে না হয়, সেজন্য এই “গণহারে ভুল” সিরিজটা বানানো……
কি নাকি কী?
যখন হ্যাঁ/না দিয়ে উত্তর দেয়া যায়, তখন কি। অন্য সকল সময়েই কী। লেখার সময় এটা খুবই জরুরি।
যেমন,
তুমি কি খাবে? উত্তর – হ্যাঁ/না
তুমি কী খাবে? উত্তর – ভাত, মাছ
কর/করো, ছিল/ছিলো, কোন/কোনো
কর, বল, গেল, হল – এগুলো ব্যবহার না করে আমরা করো, বলো, গেলো, হলো, ইত্যাদি ব্যবহার করি। ভালো করে ভেবে দেখুন ব্যাপারটা। এটা অনুসরণ করলে তুমি (করো) আর তুই (কর) এর মধ্যে জটিলতা এড়ানো যাচ্ছে। পাশাপাশি, কর (হাত), বল (ফোর্স), হল (হোস্টেল)। কোনটা (নির্দিষ্ট একটা) আর কোনোটা (যে কোনোটা), এই জটিলতাগুলো এড়ানো যায়। এমন আরো অনেক আছে।
যতিচিহ্ন এবং স্পেস
যতিচিহ্নের পরে স্পেস দেয়া বাধ্যতামূলক। দাঁড়ি, কমা, বা হাইফেনের পরে স্পেস লাগবেই। শুধু লং ড্যাশের পরে স্পেস না দিলেও চলে।
একাধিক জিনিসের তালিকার ক্ষেত্রে কমার ব্যবহার
এই ব্যাকরণটা অনেকেই অনুসরণ করে না। যখন তিনটা জিনিসের কথা বলবেন, তখন প্রত্যেকটার পরে কমা দেবেন। নইলে অনেক সময় অর্থ পালটে যায়। যেমন, যদি আমি লিখি – “কমলাগুলো আঁখি, পাখি আর লাকীকে ভাগ করে দাও”। এখানে আমি পাখির পরে কমা দেইনি। তাহলে, কমলাগুলো আসলে এখানে দুই ভাগ হবে। এক ভাগ পাবে আঁখি, আরেক ভাগ পাবে পাখি আর লাকী। কিন্তু যদি আমি লিখি – “কমলাগুলো আঁখি, পাখি, আর লাকীকে ভাগ করে দাও”। তাহলে এখানে তিন ভাগ হবে, প্রত্যেকে এক ভাগ পাবে।
বলার ক্ষেত্রে (মানুষটা সামনে থাকলে), এটা কোনো সমস্যা না। কিন্তু লেখার ক্ষেত্রে এটা গুরুত্বপূর্ণ।
পারে না/পারেনি
না দিতে হলে আরেকটা শব্দ হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ, ‘পারেনা’ ভুল, ‘পারে না’ সঠিক।
আর “নি” থাকবে ক্রিয়াপদের সাথেই। অর্থাৎ, ‘পারেনি’ সঠিক, ‘পারে নি’ ভুল।
ণ-ত্ব বিধান
বাংলা বর্ণমালায়
ত-বর্গে আছে ত, থ, দ, ধ ন। তাই, যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে ত,থ, দ, ধ এর সাথে দন্ত্য-ন হবে। যেমন – উড়ন্ত।
ট-বর্গে আছে ট, ঠ, ড, ঢ, ণ। যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে ট, ঠ, ড, ঢ এর ক্ষেত্রে ণ হবে। যেমন – বণ্টন, খণ্ডন।
ছোটোবেলায় পড়া কবিতাটা মনে আছে, ণ-ত্ব বিধান নিয়ে?
চাণক্য মাণিক্য গণ, বাণিজ্য লবণ মণ
বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা।
কল্যাণ শোণিত মণি, স্থাণু গুণ পুণ্য বেণী
ফণী অণু বিপণি গণিকা।
আপণ লাবণ্য বাণী, নিপুণ ভণিতা পাণি
গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ।
চিক্কণ নিক্কণ তূণ, কফোণি বণিক গুণ
গণনা পিণাক পণ্য বাণ।
চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার
কেন যেন অনেকেই চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহারে খুবই অনাগ্রহী বা কিপ্টে। চাঁদ, হ্যাঁ – এসব বানানেও চন্দ্রবিন্দু দিতে চায় না অনেকে।
সর্বনাম পরিহার করা
আমি, তুমি, আমার, তোমার – এগুলো যতটা পারা যায়, কম ব্যবহার করে লাইন রচনা করা উচিৎ। বিশেষ করে এক লাইনে দুইবার তুমি বা আমি আসাটা দ্বিরুক্তি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে “নিজের” শব্দটা ব্যবহার করে দ্বিরুক্তি কমানো যেতে পারে।
এটা অনুবাদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সাবটাইটেল অনুবাদের ক্ষেত্রে শব্দসংখ্যা কমাতেও সাহায্য করবে, পাঠক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লেখাটা পড়ে শেষ করতে সুবিধা হবে।
খুব প্রচলিত কিছু বানান ভুল
ইতিমধ্যে নয়, ইতোমধ্যে।
ব্যবহার বানানে আ-কার নেই।
আধুনিক রীতিতে সত্তা বানানে ব-ফলা নেই, সহজ করে দেয়া হয়েছে।
উনত্রিশ বানানে হ্রস্ব-উ হবে।
শূন্য বানানে ঊ-কার এবং দন্ত্য-ন হবে। অর্থাৎ, শুন্য নয়, বা শূণ্য নয়।
বাঁধা (bound) আর বাধা (obstacle)-এর মধ্যে চন্দ্রবিন্দুর পার্থক্য আছে।
কিনা শব্দটা বাদ দিয়ে লাইন লেখা যায়, তাহলে বাদ দেয়াই ভালো।
আশা করি, সবগুলো বুদ্ধিই কাজে লাগবে।